রাইটার্সে বারুদের গন্ধ [Binay Badal Dinesh] | Nana Ronger Itihas

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now

আজ সেই দিন
রক্তিম অভিবাদন
রাইটার্সে বারুদের গন্ধ



পরাধীনতার নাগপাশ থেকে দেশকে মুক্ত করার শপথ নিয়ে বিপ্লবের বীজ বুনেছিলেন একঝাঁক দেশপ্রেমিক। ১৯৩০সালে এক শীতের সকালে সেই শপথকে বাস্তব রূপ দিতেই তিন বাঙালী বিপ্লবী অসীম সাহসে ভর করে ঢুকে পড়েছিলেন রাইটার্স বিল্ডিংয়ে। গর্জে উঠেছিল তাঁদের বন্দুকের নল। লক্ষ্য ছিল সিম্পসন সাহেব। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে সে তাঁদের লড়াই এখনও প্রেরণা জোগায় আমাদের।


ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। বয়স্ক রাতটা তারাদের হাত ধরে পুরানো বাসায় ফেরার তোড়জোড় করছে। কুয়াশায় ভেজা ফুটপাতে কৃষ্ণচূড়া ফুলের অলস শয্যা। ৭০নং পার্ক স্ট্রিট। বাড়ির দরজাটা নিঃশব্দে খুলে গেল। সুপ্ত শহরবাসীকে উদ্বিগ্ন না করে ধীর পায়ে বেরিয়ে এলেন বাদল গুপ্ত, দীনেশ গুপ্ত। কুড়ির কাছাকাছি বয়স। পরনে সামরিক সজ্জা। নিকুঞ্জ সেনের তত্ত্বাবধানে উঠে পড়লেন একটা ট্যাক্সিতে। ফাঁকা রাস্তায় ঝড়ের বেগে ছুটলো গাড়ি। খানিক বাদে পৌঁছলেন খিদিরপুর পাইপ‍ রোডের নির্দিষ্ট স্থানে। অন্যদিকে, মেটিয়াব্রুজের রাজেন গুহের বাড়ি থেকে পথে নামলেন বিনয় বসু। রসময় শূরের সঙ্গে চলে এলেন পাইপ রোডে। তারপর বিনয়, বাদল, দীনেশ একসঙ্গে শুরু করলেন সেই ঐতিহাসিক যাত্রা। যা আজও শিহরণ জাগায় মনের অন্দরমহলে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উধাও ঠাণ্ডার আমেজ। সময় গড়াচ্ছে। রাইটার্স বিল্ডিংয়ের সামনে সেই পরিচিত ব্যস্ততা। গাড়ি-ঘোড়ার দুড়দাড় দৌড়। অজস্র মানুষের হাঁকডাক। লালমুখো সাহেবরা লালবাড়িটাতে ঢুকছেন বেরোচ্ছেন। প্রতি গেটে সিপাহীদের কড়া পাহারা। অপরিচিতদের দেখলেই হাজারো জিজ্ঞাসাবাদ। এগারোটা নাগাদ মহাকরণের সামনে এসে গাড়ি থেকে নেমে এলেন তিনজন। ধীরে সুস্থে এগিয়ে গেলেন। রাস্তা পেরিয়ে চলে এলেন পশ্চিম গেটের সামনে। সান্ত্রীরা কোনো প্রশ্ন করলো না। তাদের সাহেবী পোশাক এবং চলন বলন দেখে কারো মনে কোনো সন্দেহ জাগেনি। মাথায় সুন্দর টুপি, গলায় ঝোলানো মাফলার। ইউরোপীয়দের মতো গটগট করে ঢুকে গেলেন। বিল্ডিংয়ে ঢোকামাত্রই তাঁদের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো। চোখের দৃষ্টিতে প্রতিশোধের আগুন। অলস ভঙ্গি নিমেষে উধাও। তড়িৎগতিতে সিঁড়ি পেরোতে লাগলেন। তাঁদের লক্ষ্য বড় বড় আমলাদের ঘরের দিকে। কারা বিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেল কর্নেল সিম্পসন এক মনে নিজের কাজ করছিলেন। ঘরে বসেছিলেন জ্ঞান গুহ। ঘূণাক্ষরেও টের পাননি কী ভীষণ বিপদ তাঁর সামনে। কক্ষের ভিতরে এসে দাঁড়ালেন তিনজন। প্রত্যেকের হাতেই ঝকমকে রিভলভার। গগনভেদী আওয়াজ আর এক টুকরো লালাভ আলো ছিটকে বেরুলো ধাতব নল দিয়ে। ঢলে পড়লেন সিম্পসন। গুলি বুক ফুটো করে বাইরে বেরিয়ে গেছে। বারুদের গন্ধ মেখে রাইটার্সে শুরু হলো এক ঐতিহাসিক অভিযান।


তিন বাঙালী যুবকের সেই সংগ্রাম আজও আমাদের অবাক করে। কতটা সাহসী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলে এইরকম আক্রমণ শানানো যায় তা ভাবার বিষয়। পুলিসের তীক্ষ্ণ নজর এড়িয়ে রাইটার্সে ঢোকা এবং বেরোনোর পথ রুদ্ধ জেনেও হত্যাকাণ্ড ঘটানোর মানসিকতা দেখে উদ্বুদ্ধ হয় বিপ্লবীরা। – মহাকরণের অলিন্দ সেদিন রণক্ষেত্রের চেহারা। গুলির হুঙ্কার আর বারুদের তীব্র গন্ধে রুদ্ধশ্বাস কেরানিকুল ও তাঁদের সাহেববর্গ। বিদেশী শোষকদের কাঁপন ধরিয়ে দেন বিনয়, বাদল, দীনেশ। পুলিস একসময় সম্বিৎ ফিরে পেয়ে প্রতিরোধ শুরু করে। বিপ্লবীদের গুলিও প্রায় নিঃশেষ। তাঁরা একটা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। মৃত্যুর পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। আর দেরি করলে বিপদে পড়ে যাবে বিপ্লবী আন্দোলন। কোনোমতেই জ্যান্ত ধরা দেওয়া চলবে না। বাদল মুখে পুরে দিলেন বিষের প্যাকেট। বিনয় কালবিলম্ব না করে জিভে ঢেলে দিলেন পটাশিয়াম সায়ানাইড। কিন্তু বিষে যদি প্রাণ না যায় সেই ভেবে রিভলভারটা চেপে ধরলেন গলার ঠিক নিচে। অবিচলভাবে ট্রিগার দাবালেন। গলার মাংস ছিঁড়ে গুলি মাথায় পৌঁছালো। রণক্লান্ত বীর রক্তাক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়লেন মেঝেতে। তার আগে দীনেশ জ্ঞান হারিয়েছে। তিনিও বিষপান করেছেন, গুলি চালিয়েছেন নিজের দেহে। বাদল ঘটনাস্থলেই মারা যান। বিনয় আর দীনেশকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৩ই ডিসেম্বর বিনয় বসু মারা যান। নিজের ক্ষতস্থান দু’হাতে খুঁচিয়ে বিষাক্ত করে চলে গেলেন বীর বিপ্লবী। কিন্তু বেঁচে উঠলেন দীনেশ গুপ্ত। 

কিঞ্চিৎ সুস্থ হয়ে ওঠার পর তাঁকে পাঠানো হয় আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। আলিপুর আদালতে গার্লিক সাহেবের এজলাসে বিচার শুরু হয়। ফাঁসির আদেশ হয়। দেশবাসী দীনেশকে বাঁচানোর জন্য জয়েন্ট ডিফেন্স কমিটি গড়ে হাইকোর্ট পর্যন্ত মামলা চালায়। কিন্তু স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল পুরানো আদেশই বহাল রাখে।


কলমে – শেখ আনিসুর রহমান আনিস
ঢাকা, বাংলাদেশ।

লেখকের অন্যান্য লেখা – বাঘা যতীন


।। আগ্রহী লেখকদের আহ্বান।।

আপনাদের মূল্যবান লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের। যেকোনোও সময়, যেকোনও দিন। আমরা প্রকাশ করবো।

বিষয়:-
বিজ্ঞানের আবিষ্কার,চলচ্চিত্র, খেলাধুলা, সভা-সমিতি, মনীষীদের জীবন, ধর্মান্ধতা, সামাজিক সংকট, কুসংস্কার বিরোধী, পলিটিক্যাল স্ক্যাম, পলিটিক্যাল ইস্যু, পলিটিক্যাল টেরোরিজম, সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এমন যেকোন বিষয়েই লেখা পাঠানো যাবে।

নির্দিষ্ট কোন শব্দ সীমা নেই।
WhatsApp করে লেখা পাঠান:- 8116447650

…. প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন আমাদের WhatsApp নম্বরে

Leave a Reply