সাইমন কমিশন কি এবং সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে ভারতীয়েদর আন্দোলন |
সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলন
সাইমন কমিশন ?
সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলন
সাইমন কমিশন (Simon Commission)
সাইমন কমিশন কবে ভারতে আসে
সাইমন কমিশন কবে গঠিত হয়
সাইমন কমিশন কেন গঠিত হয়েছিল
সাইমন কমিশন কেন গঠিত হয়
সাইমন কমিশন কেন ভারতে আসে
সাইমন কমিশন pdf
সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলন
সাইমন কমিশন কবে ভারতে এসেছিল
সাইমন কমিশন কবে ভারতে আসেন
সাইমন কমিশন
উত্তর :
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নতুন গতিবেগের সম্ভবত সবচেয়ে বড় কারন ‘সাইমন কমিশন’ নিয়োগ।
উদ্দেশ্য:
এই কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য ছিল – (১) মন্টেগু চেমসফোর্ড আইনের কার্যকারিতা বিচার। (২) ভারতীয়দের প্রশাসনিক যোগ্যতার মূল্যায়ন। (৩) ভবিষ্যতের জন্য কতটুকু শাসন সংস্কার প্রয়োজন তা নির্ধারণ করা।
কমিশন গঠন:-
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সর্বদলীয় সাতজন সদস্য নিয়ে কমিশন টি গঠিত হয়। লিবারেল পার্টির সদস্য আইনবিদ স্যার র্জন সাইমনের নেতৃত্বে এই কমিশন গঠিত হয়েছিল; তাই এর নাম সাইমন কমিশন।
প্রাথমিক প্রভাব:
সাইমন কমিশন নিয়োগ ভারতের সংগ্রামকে তিন ভাবে প্রভাবিত করেছিল-
প্রথমত:
কোন ভারতীয়কে কমিশনে না রাখার ঘটনায় ভারতবাসী রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষার কোন মূল্যই যে তাদের কাছে নেই তা আবার প্রমাণিত হল।
দ্বিতীয়তঃ
সরকারের এই প্রতিক্রিয়াশীল নীতি ভারতীয় নেতাদের এক ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করল। সরকারের এই নীতি অনেকেরই রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে দিল ।
ভারতীয় দলের প্রতিক্রিয়া:
(১) কংগ্রেস:
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের ৮ নভেম্বর সাইমন কমিশন গঠন করার কথা ঘোষণা করা হলো। আর ঐ বছর ডিসেম্বরে মাদ্রাজ কংগ্রেসের সভাপতি ডক্টর আনসারী ঘোষণা করলেন যে কংগ্রেস এই কমিশন পুরোপুরি বয়কট করবে।
(২) মুসলিম লীগ:
মুসলিম লীগও কমিশনকে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে মোহাম্মদ সফির নেতৃত্বে একদল মুসলমান সাইমন কমিশনকে সমর্থন জেলা।
(৩) লিবারেল ফেডারেশন:
লিবারেল ফেডারেশনের নেতা, তেজ বাহাদুর স্প্রু, কংগ্রেসকে সমর্থন করলেন।
কংগ্রেস কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাব:
ভারতীয় সংবাদপত্রগুলি তারস্বরে সাইমন কমিশনের সমালোচনা আরম্ভ করে। এই পরিবেশে কংগ্রেস প্রস্তাবনায় যে-
(১) ভারতের সকল রাজনৈতিক দল সাইমন কমিশন বয়কট করবে।
(২) যেদিন সাইমন কমিশন বোম্বাই বন্দরে নামবে সেদিন সারা ভারতে গণবিক্ষোভ দেখানো হবে।
(৩) সাইমন কমিশন যখন যে শহরে যাবে সেখানে ‘Go Back Simon’ ধ্বনি দ্বারা, কমিশনকে ধিক্কার জ্ঞাপন করা হবে।
(৪) কমিশনকে সামাজিক বয়কট করার প্রস্তাবও গৃহীত হয়। কংগ্রেসের এই প্রস্তাব জনগণের মধ্যে দারুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।
বিরোধিতা:
৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সাইমন ভারতে এলে ভারতের বিভিন্ন শহরে হরতাল অনুষ্ঠিত হয় ও সাইমনকে কালোপতাকা দেখানো হয়। সাইমন কমিশন বিরোধী বয়কটকে জাতীয় আন্দোলনে পরিণত করে। পুলিশ প্রতিবাদকারী জনতার ওপর বর্বর আক্রমণ চালালে জেদ আরও বেড়ে যায়। কলকাতা, লাহোর, লক্ষ্ণৌ-এ খলীকুজ্জমানের নেতৃত্বে ঘুড়িতে ‘সাইমন ফিরে যাও’ লিখে তা আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হয়। জহরলাল ও গোবিন্দবল্লভ পন্থ পুলিশের লাথিতে আহত হন। লাহোরে সাইমন বিরোধী মোর্চার পরিচালনার সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে লাজপত রায়ের মৃত্যু হয়।
কমিশনের বক্তব্য:
সাইমন কমিশন অত্যন্ত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তার কাজ করেছিল। ১৯৩০ এর মে মাসে কমিশনের রিপোর্ট ঘোষিত হয়।
(১) কমিশন দ্বৈত শাসনের অবসান চেয়েছিল,
(২) আইন বিভাগের কাছে দায়বদ্ধ মন্ত্রীদের ওপর প্রাদেশিক শাসনভার অর্পণের সুপারিশ করে,
(৩) গভর্নরদের কিছু বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন। দেশীয় রাজ্য সহযোগে কেন্দ্র একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার গঠনের সুপারিশ করেন,
(৪) শাসনতান্ত্রিক প্রধানদের আইনসভার আওতার বাইরে রাখতে হবে এবং
(৫) সর্বোপরি কমিশন বয়স্কদের ভোটাধিকার অবাস্তব বিবেচনা করেছিল; যদিও ভোটাধিকার ও আইনসভার পরিধি বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিল।
পরিশেষে বলা যেতে পারে যে সাইমন কমিশনের প্রতিবেদন ব্রিটিশ মননশীলতায় প্রভাব ফেলেছিল। এমনকি ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে যে সাংবিধানিক পরিবর্তন এসেছিল সেক্ষেত্রেও এর প্রভাব ছিল অপরিসীম।
পূর্ণ স্বাধীনতা লক্ষ্য:
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজ কংগ্রেসের যুব নেতা জহরলালের সভাপতিত্বে পূর্ণস্বাধীনতার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হল এবং এই উদ্দেশ্যে দিল্লিতে একটি সর্বদলীয় সম্মেলন হয়। সেখানে মতিলাল নেহেরুর সভাপতিত্বে একটি কমিটি (নেহেরু কমিটি) গঠন করে তার ওপর ভবিষ্যৎ ভারতের জন্য একটি সংবিধান রচনার ভাড় দেওয়া হয়। এই কমিটি ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসনের (Dominion Status) আদর্শে সংবিধানের খসড়া প্রস্তুত করে। কিন্তু যুবনেতা ছিলেন পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষপাতি।
লাহোর কংগ্রেস (১৯২৯):
এদিকে স্যান্ডার্স হত্যা, লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা, ভগৎ সিংহ ও বটুকেশ্বরের বোমা ছোঁয়ার ঘটনা প্রভৃতি হিংসাশ্রয়ী মানসিকতাকে শান্তিপূর্ণ পথে প্রভাবিত করার জন্য কংগ্রেসে তাগিদ অনুভূত হল। তদুপরি বড়লাট লর্ড আরউইন গান্ধীজিকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন যে কংগ্রেসের দাবি-দাওয়া সম্পর্কে কোন প্রতিশ্রুতি দেওয়া অসম্ভব।
এই পরিস্থিতিতে জহরলালের সভাপতিত্বে বসল কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশন (১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ) – (১) পূর্ণ স্বরাজের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। (২) ও বছর (১৯২৯) ৩১ ডিসেম্বর উড়ল ভারতের তেরঙ্গা পতাকা। (৩) বছর স্থির হল ২৬ শে জানুয়ারি ‘স্বাধীনতা দিবস’ পালন হবে। (৪) অসহযোগ আইন অমান্যের সিদ্ধান্তও নেওয়া হলো।
তবে এই প্রথম কংগ্রেসে (১) পূর্ণ স্বরাজের আদর্শ গ্রহণ করল, (২) ডোমিনিয়নের আদর্শ চিরতরে বিসর্জন দিল। (৩) জাতীয় কংগ্রেসে তারুণ্যের অভিষেক হলো। (৪) কংগ্রেসের গৃহীত হল বামপন্থী মতাদর্শ।
বলা বাহুল্য ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি থেকে স্বাধীনতা লাভ অবধি ঐ বিশেষ দিনটিকে ভারতের স্বাধীনতা দিবস হিসেবেবে পালন করা হতে থাকে। স্বাধীনোত্তর ভারতে তাই ঐ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি সার্বভৌম প্রজাতান্ত্রিক ভারতের নতুন সংবিধান গৃহীত হয়। এটি স্বাধীন ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস।