[PDF] রামজন্মভূমি বাবরি মসজিদ ও ভারতবর্ষ | Ram Janmabhoomi Babri Masjid and India

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now

 



রামজন্মভূমি
বাবরি মসজিদ ও ভারতবর্ষ PDF
বাবরি মসজিদ
রাম মন্দির
বাবরি মসজিদের
ইতিহাস
অযোধ্যা রাম
মন্দির



সূচীপত্র

 

দ্বিতীয়
সংস্করণের ভূমিকা
প্রথম
সংস্করণের ভূমিকা
 
প্রথম
অধ্যায় : বাল্মীকি রামায়ণ: সর্বকালের মহাকাব্য
দ্বিতীয়
অধ্যায় : অযোধ্যাকাণ্ডঃ অবস্থিতি, কিংবদন্তী, ইতিবৃত্ত
তৃতীয়
অধ্যায় : রামজন্মস্থান ও জন্মমন্দির
চতুর্থ
অধ্যায়: বাবরি মসজিদে উৎকীর্ণ পরিবর্তনশীল লিপিমালা
পঞ্চম
অধ্যায় : উৎকীর্ণ লিপি ও জন্মস্থান
ষষ্ঠ
অধ্যায়: মন্দির মন্দির-মসজিদ প্রত্নতত্ত্ব: ১৮১৩-১৯৯০
সপ্তম
অধ্যায় : মন্দির-মসজিদ বিরোধের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত ১৮৫০-১৯৯০
অষ্টম
অধ্যায় : মুশ্লিম অনুশাসনে মসজিদ ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের
ধর্মীয় অধিকার
নবম
অধ্যায়: ধর্ম ও ভারতবর্ষ
দশম
অধ্যায়: বিবেকানন্দ: বুদ্ধ-খৃষ্ট-মহম্মদ ও হিন্দু, শূদ্র,
মুসলমান
একাদশ
অধ্যায় : রবীন্দ্রভাবনায় হিন্দু-বৌদ্ধ- ইসলাম ও খৃষ্টান : ধর্মতন্ত্রের
অধার্মিকতা
দ্বাদশ
অধ্যায় : ভারতবর্ষ, ধর্ম ও জনসংখ্যা : খৃঃ
পূঃ ২০০১ খৃঃ 2001
সূত্রাবলী:
পরিশিষ্ট:
(১)
বাবরি মসজিদের গাত্রে খোদিত লিপি ১৮১৩, ১৮৮৬, ১৯২১
(২)
বাবরের শেষ ইচ্ছা
(৩)
বাবরি মসজিদের ধ্বংসস্তূপের প্রত্নতত্ত্ব
(৪)
ভ্রম সংশোধন

 

সারণি-সূচী

১.
বৈদিক সাহিত্যে রাম শব্দের পৌনঃপুন্য
2.  ফুহরেরের ৪২নং এবং বেভেরিজের ২নং লিপির তুলনা
৩.
বিবেকানন্দ সমগ্র রচনা ও বক্তৃতায় মহম্মদ
ও মুসলমান শব্দের উল্লেখ সংখ্যার বিশ্লেষণ
৪. ভারতে
তপসিলভুক্ত জাতি ও উপজাতির উপর
হত্যা, পীড়ন ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও অন্যান্য অপরাধের
মোট সংখ্যা, ১৯৮১-৮৬
৫. বুকাননের
সমীক্ষাভুক্ত বাংলা ও বিহারের জিলাসমূহে
হিন্দু ও মুসলমানের সংখ্যা,
১৮০৭-১৩
৬. খাস
বাঙালায় হিন্দু-মুসলমানের সংখ্যা, ১৮৮১-১৯০১
৭.  ১৮৮১-১৯৩১ সালে সংখ্যাবৃদ্ধি ও শিক্ষিতের হার,
১৯৩১
৮.  বাংলার
বিভিন্ন অঞ্চলে মোট জনসংখ্যায় হিন্দু ও মুসলমানের শতকরা
অংশ, ১৮৮১-১৯৩১
৯.  ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ লোকসংখ্যা, ১৮০১-২০০১
১০.  ব্রহ্মদেশ
সহ ভারতবর্ষের ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যা, ১৮৮১-১৯৩১
১১. ব্রহ্মদেশ
সহ ও ব্রহ্মদেশবাদে ভারতে
ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যা, ১৮৮১ ও ১৯৩১
১২.  ভারতবর্ষে
বয়স শ্রেণী ও ধর্মীয় সম্প্রদায়
অনুযায়ী জনসংখ্যার শতকরা অনুপাত, ১৯৩১
১৩.  ধর্ম
ও জাতি অনুযায়ী ভারতবর্ষে প্রজননক্ষমা বিবাহিতাদের সন্তানসংখ্যা, ১৯৩১
১৪.  ভারতবর্ষে
১৫-৪০ বয়স্কদের তুলনায়
৬০+বয়স্কদের শতকরা অনুপাত
১৫.  খণ্ডিত
ভারতের ধর্ম-ভিত্তিক জনসংখ্যা, ১৯০১-২০০১
১৬.  ভারতে
ধর্মীয় জনসংখ্যাঃ এক নজরে এক
শতাব্দী
১৭.
ভারতে তপসিল জাতি-উপজাতি ও মুসলমানদের সংখ্যা,
১৯৬১-১৯৮১
১৮. ভারতে
মায়ের শিক্ষার মান ও প্রজনন প্রবণতা,
১৯৮৮
১৯. ভারতবর্ষের
জনসংখ্যা, খৃঃ পূঃ ২০০১- খৃ: ২০০১

 

দ্বিতীয়
সংস্করণের ভূমিকা

(1)

 

১৯৯২
খৃষ্টাব্দের ৬ই ডিসেম্বর সন্ধ্যা
ছটা দশমিনিটের সময় বাবরি মসজিদের শেষ গম্বুজ ভেঙে পড়ল। ১৯৪৯ সালের ২২শে ডিসেম্বর রাত্রির অন্ধকারে বাবরি মসজিদের অভ্যন্তরে শ্রীরামচন্দ্র ও আরও কয়েকজনের
মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫০ সালের ২৫শে এপ্রিল উত্তর প্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আদালতে বলা হয়,

 “মামলার অন্তর্ভুক্ত সম্পত্তিটি বাবরি মসজিদের সম্পত্তি বলে পরিচিত এবং দীর্ঘকাল। ধরে মুসলমানদের উপাসনার জন্য মসজিদটি ব্যবহৃত হয়েছে। এটি রামচন্দ্রজীর মন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি।… ১৯৪৯ সালের ২২শে ডিসেম্বর রাত্রিতে অন্যায় ভাবে সংগোপনে শ্রীরামচন্দ্রের মূর্তিটি ভেতরে স্থাপিত হয়েছে।”

 

বাবরি
মসজিদের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় জীবনদর্শনের ধর্মসহিষ্ণুতার একটি অপাতমৃত্যু ঘটল। কিন্তু মানুষ অজেয়, মানুষের মূল্যবোধ অজেয়। বহু অন্ধকারযুগ ইতিহাসে নেমে এসেছে, আর মানুষ কঠিন-কঠোর সংগ্রামের মধ্যদিয়ে আবার নতুন করে প্রমাণ করেছে, ইতিহাসের অগ্রগতি রুদ্ধ করা যায় না। এ-শতাব্দীর শেষে
একবিংশ শতাব্দীর প্রথম প্রভাতে এই ভারতবর্ষে ১০০
কোটী মানুষের মধ্যে থাকবে পৃথিবীর অর্ধেক নিরক্ষর। এ-শতাব্দীর শেষে
ভূমিহীন চাষীর সংখ্যা হবে ১০ কোটী। অর্থাশন
ও অনশনক্লিষ্ট মানুষের সংখ্যা পঞ্চাশ কোটার কাছাকাছি থাকবে। এ-শতাব্দীর শেষে
অস্পৃশ্য অন্তাজ-শুদ্রদের উপর নিপীড়ন কমবে, এমন কোন প্রত্যাশা আমাদের নেই। এ-শতাব্দীর শেষে
সুস্থ জীবনধারণের পক্ষে যা-কিছু অত্যাবশ্যক,
তার শোকাবহ অভাবগ্রস্ত হয়ে থাকবে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে
কোটী কোটী গরীব হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খৃষ্টান।

 

ধর্মান্ধতার
বন্যায় যারা আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ
ফসলগুলিকে ধ্বংস করতে চাইছে, তারা অন্ধ নয়, তারা ভালো করেই চোখে দেখে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, যুগে যুগে এরা “সেই ধর্ম দিয়ে মানুষকে যেমন ভীষণ মার মেরেছে এমন বিষয়বুদ্ধি দিয়েও নয়; মেরেছে প্রাণে মানে বুদ্ধিতে শক্তিতে, মানুষের মহোৎকৃষ্ট ঐশ্বর্যকে বারবার ছারখার করেছে।… পৃথিবীতে অপ্রতিহত প্রভুত্ব নিয়ে রাজা যেমন দুর্দান্ত অরাজকতায় মত্ত হয়েছে, প্রজার রক্ষাকর্তা নাম দিয়ে প্রজার সর্বনাশ করতে কুণ্ঠিত হয়নি, এবং অবশেষে সেই কারণেই আজকের ইতিহাসে রাজা থেকে রাজার কেবলই বিলুপ্তি ঘটছে, ধর্মসম্বন্ধেও অনেকস্থলে ধর্মতন্ত্রের নিদারুণ অধার্মিকতা দমন করার জন্যে, মানুষকে ধর্মপীড়া থেকে বাঁচাবার জন্যে, অনেকবার চেষ্টা দেখা গেল। আজ সেই দেশেই প্রজা যথার্থ স্বাধীনতা
পেয়েছে যে দেশে ধর্মমোহ মানুষের চিত্তকে অভিভূত করে এক দেশবাসীর মধ্যে পরস্পরের প্রতি
ঔদাসীন্য বা বিরোধকে নানা আকারে ব্যাপ্ত করে না রেখেছে।”

 

রবীন্দ্রনাথ
ইতিহাসের এই অমোঘ সত্যের উল্লেখ করে দেখিয়েছিলেন, সেজন্যই নবজীবনের প্রয়াসী পৃথিবীর
রাষ্ট্র-বিপ্লবগুলি ছিল ধর্ম হননের আগুনে উদ্দীপ্ত। যারা আজ ধর্মোন্মত্ততার বিষ ছড়িয়ে
ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে বিভেদ-বিচ্ছিন্নতা হিংসা ও নৃশংসতার আগুন জ্বালাচ্ছে, তারা ধর্মান্ধ
নয়, তারা সচেতন। তারা চাইছে, হাজার হাজার বছর ধরে ভারতবর্ষে যে অন্ত্যজ, যে শূদ্র,
যে চণ্ডাল, যে খেটে-খাওয়া মানুষের দল সম্পদ তৈরী করে মুষ্টিমেয়ের বিলাস ব্যসনের যোগান
দিয়ে অর্ধশিনে অনশনে দিন যাপন করে, যারা শুরুপ্রায়কলুষিত জল পান করে তৃষ্ণা মেটায়
9 তারা বিচ্ছিন্ন থাকুক। সমাজ-প্রবাহের নির্মম সত্যকে ধর্মান্ধতার অন্ধকারে আড়াল করে
রাখলে এরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেনা। কোটী কোটী ভূমিহীন হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খৃষ্টান
তাহলে জমির জন্য লড়বে না, শ্রমের ন্যায্য দামের জন্য লড়বেনা, লড়বে একে অন্যের বিরুদ্ধে,
হত্যা করবে স্ব-জনকে, ভাইকে, বন্ধুকে। ধর্মান্ধতার এই গভীর চক্রান্ত থেকে মুক্তি পেতে
হলে পরিপূর্ণ সত্যকে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। আর ধর্ম মোহমুক্ত এক সুস্থ, সুন্দর
ও প্রকৃত মুক্ত সমাজের প্রতিষ্ঠার জন্য মিলিত প্রয়াস কিছুতেই শিথিল করা চলবে না।

 

(2)

 

বইটির প্রথম
সংস্করণ চারমাসে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৯১ সালের ১০ই মে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের
দ্বারভাঙা ভবনে এক সভায় অধ্যাপক ধীরেশ ভট্টাচার্য একখানি বই অধ্যাপক এ ডব্লিউ মাহমুদের
হাতে তুলে দিয়ে আনুষ্ঠানিভাবে বইটি প্রকাশ করেন। ‘দেশহিতৈষী’, ‘একসাথে’, ‘সংগ্রামী
হাতিয়ার’ প্রমুখ সাময়িক পরের সমালোচনা এবং ‘দ্য ষ্টেটম্যান’, ‘গণশক্তি’, ‘বসুমতী’
প্রভৃতি দৈনিক পত্রে বইয়ের বিষয়বস্তু প্রকাশের ফলে পাঠকদের উৎসুকা বাড়ে। বাংলা দেশেও
প্রচুর বই গিয়েছে। দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশে ন্যাশনাল বুক এজেন্সীর শ্রীনন্দ চট্টোপাধ্যায়
মহাশয়ের উৎসাহ এবং বাণী প্রকাশনীর শ্রী শক্তিসাধন ভট্টাচার্যের কঠোর পরিশ্রম অনেকখানি
সাহায্য করেছে।

 

ক্রমলব্ধ
নব নব তথ্য কতকটা বিচ্ছিন্নভাবে পরিবেশিত হওয়ার ফলে প্রথম সংস্করণ খানিকটা পুনরাবৃত্তির
ভারে ভারাক্রান্ত ছিল। এবার তথ্যগুলিকে আরও একটু সুবিন্যস্তভাবে উপস্থাপিত করার চেষ্টা
করেছি।

 

বইটির
দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশে বিলম্বের জন্য এবং এই সংস্করণে মুদ্রণ
প্রমাদের জন্য অনিসন্ধিৎসু পাঠকবর্গের কাছে বিনীতভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণের
মধ্যবর্তীকালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়ে গেল। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছিলেন, ৬ই ডিসেম্বর রামজন্মভূমি
বাবরি মসজিদ চত্বরে করসেবা ভজনকীর্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। উত্তর প্রদেশ সরকার আদালতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বিতর্কিত স্থল সম্বন্ধে তাঁরা এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় মেনে চলবেন, ঐ এলাকায় স্থিতাবস্থা
ভঙ্গ করে। কোনরূপ হাঙ্গামা তাঁরা বরদাস্ত করবেন না, এবং কোনভাবেই কোনো নির্মাণকার্য হবে না। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ৬ই ডিসেম্বরকে লক্ষ্য
রেখে মসজিদ ভাঙ্গার গোপন ষড়যন্ত্র চলেছে কয়েকমাস ধরে। ১৯৯৩ সালের ১লা জানুয়ারী ‘ফ্রন্ট লাইন’ লিখেছেন, উত্তর প্রদেশের বজরঙ্গ দলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা কবুল করেছেন যে, বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার জন্য সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে বারো হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। একজন যন্ত্রকুশলী মসজিদটি সরজমিনে পরীক্ষা করে ভাঙ্গার পাকা ছক করেছিলেন এবং
কর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের কাজ ভাগ করে দিয়েছিলেন। সেজন্য তারা একই সঙ্গে কাঠামো এবং গম্বুজগুলি ভাঙ্গতে পেরেছে।

 

“জয়
শ্রীরাম” ধ্বনির মধ্যে ১১-৫০ মিনিটে
প্রথম করসেবক দক্ষিণ গম্বুজে উঠে। এরপর হাজার হাজার করসেবক মসজিদের উপরের দিকে উঠতে থাকে। সমবেত করসেবকের সংখ্যা ছিল দুলক্ষের মতো। ১-৩০ মিনিটেরাপিড
এ্যাকশন ফোর্সের চারটি দল করসেবকদের ইষ্টকবৃষ্টি
অগ্রাহ্য করে ঘটনাস্থল থেকে দু-কিলোমিটার দূরে
পৌঁছে যায়। আধঘণ্টার মধ্যে ফৈজাবাদের জিলা ম্যাজিস্ট্রেট এদের বেতার বার্তায় বলেন, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আয়ত্তে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোন প্রয়োজন নেই, নিজেদের নিরাপত্তার খাতিরেই তাঁরা যেন ফৈজাবাদ চলে যান।

 

করসেবকরা
মসজিদ ভাঙ্গার কাজ পূর্ণোদ্যমে চালিয়ে যেতে থাকে। সাধ্বী রীতাম্বরার সঙ্গে হাজার হাজার করসেবক চীৎকার করতে থাকে, “এক ধাক্কা আউর
দো, বাবরি মসজিদ তোড় দো।” ২-৫৫ মিনিটে
বামদিকের গম্বুজ, ৩-০৫ মিনিটে
ডানদিকের গম্বুজ আর ৪-৫০
মিনিটে কেন্দ্রীয় গম্বুজ ভেঙ্গে পড়লো। ৬-১০ মিনিটে
বাবরি মসজিদ অসংখ্য পাথরের টুকরা হয়ে মাটিতে ছড়িয়ে পড়লো। আবার হাজার কণ্ঠে চীৎকার উঠলো, “রাম নাম সত্য হ্যায়, বাবরি মসজিদ ধ্বস্থ হ্যায়।” হায় আদিকবি বাল্মীকি !!

 

৬ই
ডিসেম্বর রাত্রিবেলা মুক্ত হয় মুসলমানদের উপর আক্রমণ। ৭ই ডিসেম্বর কয়েকশত
ঘরবাড়ীতে আগুন লাগানো হয়। সে-রামাগ্নি ভারতবর্ষের
নানাস্থানে ছড়িয়ে পড়ে। বোম্বাই শহরে শিবসেনা বীভৎসতার ইতিবৃত্তের একটি নূতন অধ্যায় রচনা করে। বিত্তবান দুর্বত্তরা গরীবদের ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করার জন্য রামাগ্নিতে ঘৃতাহুতি দেয়। রেহাই পায়নি। এই কলকাতা। মানবধর্মজাতী
দুর্বৃত্তরা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেই ক্ষান্ত হবে না, এরা ভারতবর্ষটাকেই টুকরা টুকরো করতে বেরিয়েছে। অতএব কাণ্ডারী হুশিয়ার!!

 

ভারতবর্ষের
৮৫ কোটী জনসংখ্যার শতকরা ৫০ জন বিশুদ্ধ
শূদ্র, শ্রমজীবী, দিনমজুর। ধর্ম এদের একটাই খেটে খাওয়া ধর্ম। দিনের পর দিন উচ্চবর্ণ
ও উচ্চবিত্ত মানুষের উৎপীড়ন ও লাঞ্চনার বেদীতলে
এদের জীবনযৌবন বহুকাল স্মৃতির বিধানে উৎসর্গীকৃত ছিল। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর ‘বঙ্গদেশের কৃষক’ এবং রবীন্দ্রনাথ ‘শূদ্রধর্ম’ প্রবন্ধে এ-সম্পর্কে পরিষ্কার
আলোচনা করেছেন। ভারতবর্ষে ‘হিন্দু’ ধর্ম সম্প্রাসারিত হয়েছিল। অনার্যদের শূদ্রত্ব দান করে। পরে বৌদ্ধ, ইসলাম ও খৃষ্ট ধর্ম
প্রসারিত হয়েছিল কারণ এই উৎপীড়িত শূদ্রেরা
লক্ষে লক্ষে এ-সব ধর্মের
শরণ নিয়েছিল। আম্বেদকরের পথ অনুসরণ করে
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের এক বৎসর পরে
বিহারে একলক্ষ হরিজন বুদ্ধের শরণ নিয়েছে।

 

এই
“হতভাগিনী’” মাতৃভূমি আবার নতুন গৌরবে মহীয়সী হতে পারে একমাত্র হিন্দু-মুসলমান মিলনের মধ্য দিয়ে, এ-কথাও বিবেকানন্দ
ঘোষণা করেছিলেন। বিবেকানন্দ বলেছিলেন,

 “…এটা খুবই স্বাভাবিক যে, একই সময়ে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে এবং নির্বিরোধে আমার ছেলে বৌদ্ধ, আমার স্ত্রী খৃষ্টান এবং আমি নিজে মুসলমান হতে পারি”।

 

রবীন্দ্রনাথ
‘মৌলবাদ’ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেছেন, পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের স্বতন্ত্রভাবে এগিয়ে যাওয়ার আকাঙ্খাকে আমরা যদি মেনে নিই, তাহলেই দেশের কল্যাণ হবে। তারও মতে কোন হিন্দু পিতার এক ছেলে মুসলমান
ও এক ছেলে বৈষ্ণব
হওয়া সত্ত্বেও

“এক পিতামাতার স্নেহে
একত্র বাস করিতেছে, এই কথা কল্পনা
করা কখনই দুঃসাধ্য নহে বরঞ্চ ইহাই কল্পনা করা সহজ—কারণ ইহাই যথার্থ সত্য, সুতরাং মঙ্গল ও সুন্দর”।

 

১৯৪৭
সালে মুসলমানদের উপর যখন নৃশংস আক্রমণ চলেছিল [অবশ্যই সীমান্তের ওপারে হিন্দুদের উপরও ], তখন গান্ধীজী লিখেছিলেন,

“মুসলমানদের
উপর নিষ্ঠুর আক্রমণ চলিতেছে। কিন্তু এই ভারতীয় মুসলমানগণ
কাহারা ? তাহাদের বহুল অংশ তো আর আরব
দেশ হইতে আসে নাই। বাহির হইতে তাহাদের খুব অল্পই আসিয়াছে। কিন্তু তাহাদের কোটী কোটী তো হিন্দু হইতে
মুসলমান হইয়াছে। … তাহাদের এই ভিন্ন ধর্ম
গ্রহণের জন্য আমরাই দায়ী। হিন্দু ধর্মে অস্পৃশ্যতার স্থান দিয়া এবং তথাকথিত অস্পৃশ্যগণের উপর অত্যাচার করিয়া আমরাই তাহাদের ইসলামের ক্রোড়ে ঠেলিয়া দিয়াছি। আজ সেই সব
ভাইবোনদের হত্যা করা বা তাহাদের উপর
অত্যাচার করা আমাদের সাজে না।”

 

১৯৯১
সালের ২০শে সেপ্টেম্বর ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীও এ-তত্ত্বকে স্বীকার
করে বলেছেন,

“সামাজিক অত্যাচার থেকে বাঁচার তাগিদেই তাঁরা ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন,
তাঁরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দূর্বল হতে পারেন, কিন্তু সামাজিক পরিধি থেকে তাঁরা পরিত্যক্ত
নন”।

 

রামমোহন ইসলামের
একেশ্বর তত্ত্ব সমর্থন করে ১৮০৩-০৪ সালে তাঁর অপূর্ব যুক্তিবাদী গ্রন্থ ‘তুহফত’ রচনা
করেছিলেন। বিবেকানন্দ ইসলামের সাম্যের মহিমা, মানব সভ্যতার অগ্রগতির ক্ষেত্রে ইসলামের
ভূমিকা এবং ভারতবর্ষে যাজকতন্ত্রের একচেটিয়া অধিকার খর্ব করার ক্ষেত্রে ইসলামের অবদানের
সপ্রশংস উল্লেখ করছেন। রামমোহন এবং বিবেকানন্দ শুধু একটি বিষয়েই ইসলামের আচরণে দুঃখ
প্রকাশ করেছেন, সেটি হল, অবিশ্বাসীদের বা কাফেরদের হত্যা করার বিধান। স্বামীজী বিষয়টি
বৈজ্ঞানিকভাবে অনুসরণ করার চেষ্টা করেছেন। “এক সময়” “একশ্রেণীর”” মুসলমান এ-ধরণের
কার্যক্রমে জড়িত ছিল, একথা বলেও বিবেকানন্দ গভীর বেদনায় আপ্লুত হয়েছিলেন।

 

কোরানের প্রথম
বাংলা অনুবাদ করেন গিরীশচন্দ্র সেন ১২৮২ বঙ্গাব্দে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ একটি বইতে
(ইসলাম থেকে হিন্দু ধর্মে এত পরিবর্তন কেন ? ) কোরাণের ২নং সুরার ১৯১ নং ধারা উদ্ধৃত
করে বলেছেন, “আর যেখানে পাও, তাদের [কাফেরদের] হত্যা কর।”
(কোরআন শরীফ হরফ প্রকাশনী, ১৯৭৪। পূঃ ৩৪)। কোরাণকে মুসলমান ভাইরা আল্লাহ্র বাণীর সংকলন
গ্রন্থ বলে মনে করেন। বেদকেও একসময় হিন্দুরা প্রত্যাদিষ্ট বাণী মনে করতেন, এমন কি
“আধুনিক ভারতের জনক”। রামমোহন রায় পর্যন্ত বেদের অভ্রান্ততায়
বিশ্বাস করতেন। অক্ষয় দত্তের তত্ত্বের ভিত্তিতে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ব্রাহ্মসমাজ
গত শতাব্দীর মধ্যভাগে বেদের অভ্রান্ততাতত্ত্ব বর্মন করেন। পরম হিন্দু বলে গৌরব বোধ
করতেন বিবেকানন্দ ও বঙ্কিমচন্দ্র। “বেদ প্রত্যাদিষ্ট বাণী”,
এই ধারণাকে তাঁরা শুধু প্রত্যাখ্যান করেই ক্ষান্ত হলেন না, যুক্তির আলোকে ঐ মনুষ্যপ্রণীত
বেদের বিচার করতে বসলেন। জাতিভেদ প্রথা এ-দেশে চরম সর্বনাশ করেছে। ঋগবেদের দশম সুক্তে
জাতিবিভাগ ঈশ্বরসৃষ্ট বলে প্রতিভাত করার চেষ্টা হয়েছে। পণ্ডিতেরা আবিষ্কার করেছেন,
এটি অনেক পরে সংযোজিত হয়েছে।

 

কোরান ‘প্রত্যাদিষ্ট
বাণী’। ১১৪টির মধ্যে ১১৩টি সুরার প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ আছে যার অর্থ ‘অনন্ত করুণাময়
পরম দয়ালু আল্লাহ্র নামে (আরম্ভ করছি)। এই ‘পরম করুণাময়’ ‘আল্লাহ’, ‘ঈশ্বর’, বা
‘গড়’ কি কোন নিরীহ নরনারীকে শুধু তাঁর সরল বিশ্বাসের জন্য হত্যার নির্দেশ দিতে পারেন
?

 

কোৱানেতো
আরও আছে, “নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করে, যারা ইহুদী এবং খৃষ্টান হয়েছে অথবা সাবেরী [হজরত
মহম্মদের আবির্ভাবের পূর্বের একেশ্বরবাদী ] হয়েছে—এদের যে কেউ আল্লাহ এবং শেষ দিবসে বিশ্বাস
করে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার আছে। তাদের কোন ভয় নেই
এবং তারা দুঃখিত হবে না।” (হরফ সং, ২, ৮, ৬২)। কোরানে আদম-ইভের
কাহিনী প্রায় হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে (ঐ, ২, ৪)। আচার্য ক্ষিতিমোহন সেন লিখেছেন,
“কুরান আরো বলেন হজরতের পূর্বে যে সব মহা পুরুষ ধর্ম সম্বন্ধে যাহা কিছু উপদেশ দিয়া
গিয়াছেন, সেই সব সত্যও বিশ্বাস করিতে হইবে (২, ৪)। পূর্ববর্তী সব সত্যকে আরও দৃঢ়ভাবে
ঘোষণা করাই কুরানের কাজ (৩,৩)। কাজেই কুরান সব যুগের সব ভক্তদের প্রতিই শ্রদ্ধাবান
হইতে উপদেশ দেন। কুরান আরো বলেন, এমন দেশ বা জাতি নাই যাহাতে ভগবান তাহাদের জন্য কোন
ধর্মগুরুকে পাঠান নাই (৩৫, ২৪)। এই মহাবাণী েমাশ্রয় করিয়াই নিজামুদ্দীন উলিয়ার দর্গার
হাফিজ হুসন নিজামী এক পুস্তকে লেখেন, হিন্দুস্থান কে দো পয়গম্বর, রাম ওর কৃষ্ণ। সলাম
অল্লাহী অলয়হিম। পূর্ববর্তী সকল ধর্ম-প্রবর্তকদের নামও হয়তো এখন সকলে জানে না (৪০,
৭৮)। ভগবান যখন যেখানে যে-কোনো ভক্তের কাছে যে সত্য ঘোষণা করিয়াছেন, হজরত মহম্মদ বলেন
সেই সবই ইসলাম পন্থীর পক্ষে মানা; তাহাদের মধ্যে কোনোটাকে মান্য করিয়া কোনোটাকে অমান্য
করা অনুচিত (২, ২৮৫)।… ভগবদবিশ্বাসী- মাত্রেই ভাই ভাই। সকল নরনারী সর্বজাতি তাঁহারই
সৃষ্টি। যিনি তাঁহাদের মধ্যে বেশী ধার্মিক ও সত্যব্রত তিনি ধন্য (৪৯,১৩)। হজরত মহম্মদ
বলেন, যতদিন আমরা আমাদের সব মানব ভ্রাতাকে না ভালবাসিতে পারি, ততদিন আমাদের ভগবদ্ভক্তি
মিথ্যা” । (ক্ষিতিমোহন সেন। ভারতে হিন্দু-মুসলমানের যুক্ত সাধনা।
বিশ্বভারতী, ১৩৯৭। খৃঃ ১২-১৩)।

 

মৌঃ মোবারক
করীম জওহর হরফ’ প্রকাশিত কোরানের ভূমিকায় বলেছেন, “কোরআন শরীফের মধ্যে অনেকের
পক্ষেই পরস্পর বিরোধী এবং অবাস্তর উক্তি লক্ষ্য করা অসম্ভব নাও হতে পারে। কারণ এ ব্যাপারটি
আপেক্ষিক, যে উক্তি একজনের কাছে বাস্তব ও বোধগম্য, আর একজনের কাছে তা অবাস্তব ও দুর্বোধ্য,
এমন কি মানসিকতার স্তর অনুযায়ী অবোধ্য হতে পারে। আসেল এটি অনুধাবন করার শক্তি ও ধৈর্যের
উপরই নির্ভরশীল। কোরান বারবার মানুষের বাস্তব বুদ্ধির উপরে, বিবেকের উপরে গুরুত্ব আরোপ
করেছে। মানুষকে বিবেচনা করার প্রেরণা দান করেছে, এবং তাকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গীর পূর্ণ
স্বাধীনতা দান করে বলা হয়েছে: ‘তোমরা কি চিন্তা কর না?’ ‘তোমাদের কি বিবেকবুদ্ধি নেই
? ‘

 

বেদ প্রসঙ্গে
বিবেকানন্দ এ-রকম যুক্তির কথাই বলেছিলেন। তিনি বেদের ততটুকুই মানতেন যতটুকু বিচারের
মাপকাঠিতে দাঁড়ায়। সব ধর্ম শাস্ত্রেই অনেক পরস্পর বিরুদ্ধ ও অবান্তর কথা রয়েছে।

 

এই স্বল্প
পরিসর পুস্তকের মধ্যে ইতিহাস-লব্ধ সত্যকে উদ্ঘাটিত করার সামান্য চেষ্টা করেছি। আমার
তত্ত্বের বিরুদ্ধ যারা যা কিছু বলেছেন, সে-সব বক্তব্যকে যথোচিত মর্যাদার সঙ্গে পাঠকদের
কাছে তুলে ধরে তারপর নিজের সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। কোন সিদ্ধান্তই শেষ কথা নয়। নতুন
তথ্যের আলোকে, যুক্তির আলোকে সব সময় নতুন করে ভাবতে হয়। যে কোন তথ্যগত ভ্রান্তি দেখিয়ে
দিলে কৃতজ্ঞচিত্তে মেনে নেব।

 

আমরা বিশ্বাস
করি, ভারতবর্ষ বহুজাতি, বহুধর্ম, বহুভাষাভাষীর দেশ। এই দেশে হাজার হাজার বছরের ভাবনার
ধারা এক মহাসাগরে বিলীন হয়েছে। এদেশের অর্ধেক মানুষ দুবেলা পেট ভরে খেতে পায় না,
এ-দেশের তিন-চতুর্থাংশ মানুষ নিরাপদ পানীয় জল পান করার সুযোগ পায় না, শতাব্দীর শেষে
পৃথিবীর অর্ধেক নিরক্ষর জনসংখ্যা এ-দেশে বাস করবে। এদেশে প্রতিদিন ধনীরা গরীবের ঘরে
ঘরে আগুন জ্বালায়, এদের হত্যা করে, এদের বকন্যাকে ধর্ষণ করে। যে-দেশ একদিন আপন পণ্যসম্ভার
রপ্তানী করে পৃথিবীর স্বর্ণভাণ্ডার নিজের ঘরে নিয়ে আসত, আজ সেই দেশ দেউলিয়া হয়ে
একদা দাসব্যবসায়ীর কাছে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

শুভবুদ্ধি
সম্পন্ন কোটী কোটী মানুষ মূঢ় ধর্মান্ধতাকে সবলে প্রত্যাখ্যান করে যুক্তির পথেই ভারতের
পূর্ণাঙ্গ সামাজিক ও অর্থনৈতিক যুক্তির জন্য সংঘবদ্ধ হবেন, এটি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
রবীন্দ্রনাথ বলে গিয়েছিলেন, মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।

 

দুর্গাপ্রসাদ
ভট্টাচার্য
২০শে আশ্বিন,
১৪০০ বঙ্গাব্দ

E-book Download Now


বাবরের শেষ
ইচ্ছা

 

বাবর হুমায়ূনকে
যে-গোপন শেষ-নির্দেশ দিয়ে যান, সেটির ইংরাজী বয়ান ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদের ‘ইন্ডিয়া
ডিভাইডেড’ পুস্তকে সংযোজিত হয়েছে। নিখিল ভারত শিয়া সম্মেলন এ বয়ানটি প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, তুর্কি ভাষায় লিখিত মূল দলিলটি ইন্দোর ষ্টেট লাইব্রেরীতে রয়েছে।

 

রবীন্দ্রনাথ
উল্লেখ করেছেন, গুরু নানকের সঙ্গে বাবরের দেখা হয়েছিল এবং বাবর তাঁকে প্রচুর উপঢৌকন
দিতে চেয়েছিলেন। নানক সে-সব প্রত্যাখান করে বলেছিলেন, পুরস্কার তিনি ঈশ্বরের কাছেই
গ্রহণ করেন। বাবরের ‘শেষ ইচ্ছা’-তে আমরা একজন ধর্ম-নিরপেক্ষ এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন
প্রশাসককে দেখতে পাই। আকবর ধর্ম-নিরপেক্ষতার ধারাকে ধর্ম সমন্বয়ের দিকে নিয়ে যেতে
চেয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ সম্রাট আকবরকে অশোকের সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন, “বৌদ্ধযুগে
অশোকের মত মোগল সম্রাট আকবরও কেবল রাষ্ট্র সাম্রাজ্য নয়, একটি ধর্মসাম্রাজ্যের কথা
চিন্তা করিয়াছিলেন। এই জন্যই সে সময়ে পরে পরে কত হিন্দু ও মুসলমান ধর্মের অন্তরতম
মিলনক্ষেত্রে এক মহেশ্বরের পুজা বহন করিয়াছিলেন। এবং এমনি করিয়াই বাহিরের সংসারের
দিকে যেখানে অনৈক্য ছিল, অন্তরাত্মার দিকে পরম সত্যের আলোকে সেখানে অধিষ্ঠান আবিষ্কৃত
হইয়াছিল।” (১৯১৮। স্বাধিকার প্রমত্ত। কালান্তর। ১৩।২৬৫)।

 

রবীন্দ্রনাথ
ঐ প্রবন্ধে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত এর ধারাবাহিকতার কথা আলোচনা করেছেন। নিম্নে বাবরের
‘শেষ ইচ্ছা’ দলিলটির বাংলা ভাষা দেওয়া হল ।

 

জহরুদ্দিন
মোহাম্মদ বাদশাহ গাজী (বাবর) কর্তৃক মুহাম্মদ নাসিরুদ্দিন হুমায়নকে প্রদত্ত গোপন শেষ
নির্দেশ

 

“হে আমার পুত্র, ভারত রাজ্য নানা রকম ধর্মের আবাস। ভগবানকে
অনেক ধন্যবাদ, তিনি তার সার্বভৌমত্ব তোমার উপর অর্পণ করেছেন। তোমার উপর এ-দায়িত্ব
আরোপিত হয়েছে যে, তোমার মানসপট থেকে সর্বপ্রকার ধর্মীয় কুসংস্কার মুছে ফেলবে, প্রত্যেক
ধর্মের বিধান অনুযায়ী ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। বিশেষ ভাবে গোহত্যা পরিহার করবে,
তা না হলে ভারতের জনগনের হৃদয় তুমি জয় করতে পারবে না, এদেশের প্রজাদের রাজানুগত্যে
বাঁধা যাবে না।”

 

 

।। আগ্রহী লেখকদের আহ্বান।।

আপনাদের মূল্যবান লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের। যেকোনোও সময়, যেকোনও দিন। আমরা প্রকাশ করবো।

বিষয়:-
বিজ্ঞানের আবিষ্কার,চলচ্চিত্র, খেলাধুলা, সভা-সমিতি, মনীষীদের জীবন, ধর্মান্ধতা, সামাজিক সংকট, কুসংস্কার বিরোধী, পলিটিক্যাল স্ক্যাম, পলিটিক্যাল ইস্যু, পলিটিক্যাল টেরোরিজম, সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এমন যেকোন বিষয়েই লেখা পাঠানো যাবে।

নির্দিষ্ট কোন শব্দ সীমা নেই।
WhatsApp করে লেখা পাঠান:- 8116447650

…. প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন আমাদের WhatsApp নম্বরে

Leave a Reply