মিথ্যার সৌন্দর্য | NANA RONGER ITIHAS

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now

 




মিথ্যার সৌন্দর্য

আবেদীন মোহাম্মদ জয়নুল



সচরাচর, মিথ্যা শব্দটি আমাদের মনের আয়নায় একটা নেতিবাচক ধারণা দেয়। যুগে যুগে শব্দটি এতই ঘৃণিত হয়েছে যে একজন মিথ্যাবাদীও মিথ্যাকে ঘৃণা করে। সভ্যতার পরিক্রমায় লক্ষ লক্ষ মানুষ খুন করা নেতারাও ভালোবাসায় পূজিত হয়েছে কিন্তু মিথ্যা অনেক ইতিবাচক ভূমিকা রাখলেও সে মানুষের ভালোবাসা পায়নি কখনও। সেই মিথ্যাকে একটু ভালোবাসা দিতেই আজকের আয়োজন।


মিথ্যারও প্রকারভেদ আছে। ভালো উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্তে মিথ্যা, ছলনা বা সত্যের মত মিথ্যা, খারাপ উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্তে মিথ্যা, বৈজ্ঞানিক মিথ্যা ইত্যাদি।

আমরা অবুঝ শিশুকে বলি ঝোপের মাঝে যেয়ো না, ওখানে শিয়াল আছে; পুকুরে নেমো না, ওখানে কুমির আছে; অন্ধকারে যেয়োনা, ওখানে ভূত আছে; রাস্তায় যেয়ো না, ওখানে পুলিশ আছে। এখানে আমরা দ্বিস্তরী মিথ্যা বলি। প্রথমত, যেখানে যা নেই সেখানে তা আছে বলে মিথ্যাচার করি। দ্বিতীয়ত, শিয়াল, কুমির, ভূত, পুলিশ সম্পর্কে শিশুকে নেতিবাচক ধারণা দিই যা প্রাণীর প্রতি আমাদের সূক্ষ্ম অবিচার। তবুও এ মিথ্যার সৌন্দর্য ও ভালো উদ্দেশ্য আছে; মূলত, আমরা এইসব মিথ্যার আশ্রয়ে শিশুর নিরাপত্তা চেয়েছি। চাঁদের টিপ, কালো গরুর দুধ, দুধ খাবার বাটি বাস্তবে না দিলেও শিশুকে আনন্দ দিয়ে ঘুম পাড়াই যা খারাপ কাজ নয়। 

আমরা অনেকেই Marjorie Kinnan Rawlings এর  A Mother In Mannville গল্পটি পড়েছি। এ গল্পে এতিম বালক মাতৃত্বের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য তার মা আছে বলে মিথ্যা ডিসকোর্স রচনা করে। এই মিথ্যার মধ্যে আমরা অতুলনীয় মিথ্যার সৌন্দর্য খুঁজে পাই।

পৃথিবীতে ধর্ম সৃষ্টির আদিতে আমরা মিথ্যার শৈল্পিক সৌন্দর্য খুঁজে পাই। প্রথম যে উন্নত মস্তিষ্কের মানুষটি সমাজ নিয়ন্ত্রণে মৃত্যুপরবর্তী শাস্তি ও পুরষ্কারের কথা বলেছিল; বিচারের জন্য আসমানের উপরে একজন সৃষ্টিকর্তা আছে বলে মানুষকে বুঝিয়েছিল তার মিথ্যার মধ্যে ভালো উদ্দেশ্য ছিল। এর থেকে মানুষ নিয়িন্ত্রিত হয়ে উপকার পেয়েছিল। এ মিথ্যার সৌন্দর্য আমরা অস্বীকার করতে পারি না।

এইসব সৌন্দর্যের মিথ্যা নেতিবাচক রূপ নিয়েছিল তখন, যখন চতুর মানুষ সাধারণ মানুষকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করেছিল এবং স্বার্থ চরিতার্থ করার নিমিত্তে সুবিধামত রঙিন মিথ্যার ঝুড়ি সাজিয়েছিল। চালাক মানুষ বলতে শুরু করেছিল তার সাথে সৃষ্টিকর্তার কথা হয়। তারা নিজেরা স্বার্থ রক্ষার্থে তাদের কথাকে সৃষ্টিকর্তার নামে চালিয়ে সাধারণ মানুষের উপর বিদঘুটে নিয়মকানুন চাপিয়ে দিয়ে তা বাধ্যতামূলক করেছিল। মিথ্যা তখন থেকে তার সৌন্দর্য হারাতে শুরু করে এবং স্বার্থসিদ্ধির ছলনায় রূপান্তরিত হয়।

বিজ্ঞানের উৎকর্ষের সাথে সাথে চতুর মানুষের মিথ্যার মুখোশ উন্মোচন হতে থাকে। বোধিসত্তার মানুষেরা তখন সত্যের সৌন্দর্যকে আলিঙ্গণ করতে থাকে। কিন্তু, প্রাচীন মিথ্যাকে কাজে লাগিয়ে সুবিধাভোগীরা যারপরনেই মিথ্যা বুনে বুনে বৈজ্ঞানিক সত্যের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হতে থাকে। তারা মিথ্যাকেই সত্য বলে প্রমাণ করার চেষ্টায় উন্মত্ত হয়। যুক্তিতে হেরে গেলে তারা সত্যের সারথিদের হত্যা করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। বর্তমানে সে কনফ্লিক্ট চলছে। মিথ্যাবাদীরা অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আদাজল খেয়ে লেগেছে। 

মিথ্যা এখনও থাকতে পারে তার সৌন্দর্য নিয়ে। অভাবের সংসারে আজও অনেক মা নিজে না খেয়ে তার সন্তানকে খাইয়ে তৃপ্ত হয় এবং বলে যে সে আগেই খেয়ে নিয়েছে। আবার প্রবাসী সন্তান অনেক কষ্টে থেকেও  তার মাকে সুখে রাখার জন্য বলে যে সে ভালো আছে। এইসব মিথ্যার সৌন্দর্যে আমরা শ্রদ্ধা না করে পারি না। কিন্তু যে মিথ্যায় স্বার্থ ও ধ্বংস জড়িত তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আমাদের মানবিক দায়িত্ব। 

প্রথিবীর ধর্মগুলো মিথ্যার আশ্র‍য়ে গড়ে উঠেছিল এবং সময়ের প্রয়োজনে সেগুলোর দরকার ছিল। কিন্তু, বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সাথে সাথে যেগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হচ্ছে সেগুলো মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকা আবশ্যক।  ধর্মগুলো যদি মানবকল্যাণে কাজ করে তা আমরা মেনে নিতে পারি কিন্তু তাদের প্রমাণিত মিথ্যাগুলো টিকিয়ে রেখে স্বার্থসিদ্ধির জন্য মানুষ হত্যা করতে এলে তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। মিথ্যার ইতিবাচক দিক সমর্থন ও নেতিবাচক দিক পরিত্যাগই হোক আমাদের আরাধ্য। ধর্ম-অধর্ম বুঝি না; মানুষের জন্য ক্ষতিকর যা তাকে আমরা কিছুতেই গ্রহণ করব না।


।। আগ্রহী লেখকদের আহ্বান।।

আপনাদের মূল্যবান লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের। যেকোনোও সময়, যেকোনও দিন। আমরা প্রকাশ করবো।

বিষয়:-
বিজ্ঞানের আবিষ্কার,চলচ্চিত্র, খেলাধুলা, সভা-সমিতি, মনীষীদের জীবন, ধর্মান্ধতা, সামাজিক সংকট, কুসংস্কার বিরোধী, পলিটিক্যাল স্ক্যাম, পলিটিক্যাল ইস্যু, পলিটিক্যাল টেরোরিজম, সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এমন যেকোন বিষয়েই লেখা পাঠানো যাবে।

নির্দিষ্ট কোন শব্দ সীমা নেই।
WhatsApp করে লেখা পাঠান:- 8116447650

…. প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন আমাদের WhatsApp নম্বরে

Leave a Reply