ইউরোপের রেনেসাঁস বলতে কী বোঝায়? ইউরোপের রেনেসাঁসের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। | ইউরোপের ইতিহাস
ইউরোপের নবজাগরণ বৈশিষ্ট্য pdf | Nana Ronger Itihas
রেনেসাঁস বলতে তুমি কী বোঝো ? ইতালিতে রেনেসাঁস কেন প্রথম সংঘটিত হয়েছিল, ব্যাখ্যা করো।
ইউরোপের নবজাগরণের কারণ ও ফলাফল | ইউরোপের নবজাগরণের ফলাফল
ইউরোপের নবজাগরণ pdf | History of Europe
What does Renaissance mean? Write the characteristics of Renaissance.
উত্তর:
ভূমিকা :
১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে অটোম্যান তুর্কিদের আক্রমণে পূর্ব রোম সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল (বর্তমান ইস্তানবুল) এর পতনের ঘটনাকে সাধারণভাবে ইউরোপে আধুনিকযুগের সূচনা বলে মনে করা হয়। তবে দেশ ভেদে আধুনিক যুগের আগমনের ক্ষেত্রে তারতম্য ছিল। যে সমস্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে ইউরোপের আধুনিকযুগের আগমন ঘটেছিল সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রেনেসাঁস, ধর্মসংস্কার আন্দোলন, ভৌগোলিক আবিষ্কার, বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ও পুঁজিবাদের আগমন।
ইউরোপের রেনেসাঁস :
ফরাসি শব্দ Renaistre থেকে রেনেসাঁস শব্দের উৎপত্তি। রেনেসাঁস কথার আক্ষরিক অর্থ হল পুনর্জন্ম। পঞ্চদশ শতকে প্রথমে ইটালিতে ও পরে পশ্চিম ইউরোপে প্রাচীন গ্রিক ও রোমান শিক্ষা সংস্কৃতির পুনরায় চর্চার সুত্রপাত হয়। এর ফলে পশ্চিম ইউরোপে যে নতুন সংস্কৃতিগত বা বুদ্ধিগত পুনরুজ্জীবন ঘটেছিল তা ইউরোপীয় নবজাগরণ বা রেনেসাঁস নামে পরিচিত।
ইউরোপের নবজাগরণের সূচনা ও প্রসার :
ইউরোপের নবজাগরণের প্রথম প্রকাশ ঘটেছিল ইটালিতে কারণ, ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে অটোম্যান তুর্কিদের আক্রমণে গ্রিক ও রোমান সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল কনস্টান্টিনোপলের পতন ঘটে। এরপর গ্রিক ও রোমান সংস্কৃতির বিষয়ের পণ্ডিতদের অনেকে তাদের মূল্যবান পুঁথিপত্র সঙ্গে নিয়ে মূলত ইটালির বিভিন্ন শহরে ও ইউরোপে এসে আশ্রয় নেয়। ক্রমশ ইটালির একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রিক ও রোমান সংস্কৃতির চর্চা শুরু হয় এবং একে কেন্দ্র করেই গ্রিক ও রোমান সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন ঘটে। এই পুনরুজ্জীবনের পশ্চাতে ইটালির ফ্লোরেন্স, জেনোয়া, মিলান, রোম ও অন্যান্য নগরের শাসক ও বিত্তশালী বণিক ও নাগরিকদের পৃষ্ঠপোষকতা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। ফ্লোরেন্সের শাসক মেদিচি পরিবার বিশেষত, কসমো ও তাঁর পৌত্র লরেঞ্জো প্রচুর অর্থদান করে গ্রিক ও রোমান সংস্কৃতি বিষয়ক পণ্ডিতদের পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন ও নবজাগরণের সূচনা হয়। এভাবে ফ্লোরেন্স “দ্বিতীয় এথেন্স” নামে পরিচিতি লাভ করে। ইটালির এই নবজাগরণ ঢেউ ক্রমশ জার্মানি, ফ্রান্স, | ইংল্যান্ড, পোর্তুগাল ও স্পেনে ছড়িয়ে পড়ে।
ইউরোপের রেনেসাঁসের বৈশিষ্ট্য :
রেনেসাঁসের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ছিল এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:-
- অজানাকে জানার ইচ্ছা ও আগ্রহ এবং যুক্তির ভিত্তিতে বিশ্লেষণ ও তা গ্রহণ। দ্বাদশ শতকের শেষদিক থেকেই ইউরোপের মানুষদের চিন্তাজগতে এই প্রবণতা শুরু হয়েছিল এবং পঞ্চদশ শতকে গ্রিক ও রোমান সাহিত্য ও দর্শন পাঠের মাধ্যমে তা আরোও বৃদ্ধি পেয়েছিল।
- নবজাগরণ উদ্ভুত যুক্তিবাদের প্রভাবে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বাধাগুলি ক্রমশই অপসৃত হতে থাকে। পাশাপাশি মানুষ আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।
- নবজাগরণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মানবতাবাদ, এর মূল কথা ছিল আধ্যাত্মিক বিষয়গুলির পরিবর্তে ইহলৌকিক জগতের ওপর গুরুত্ব আরোপ এবং মানুষের হিতসাধন। ফ্রান্সিসকো পেত্রার্ক (১৩০৪-১৩৭৪ খ্রিঃ) ছিলেন মানবতাবাদের জনক। পরবর্তীকালের উল্লেখযোগ্য মানবতাবাদী হলেন নিকোলো। | ম্যাকিয়াভেলি, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, লিওনার্দো-দা-তিনি, স্যান্তে প্রমুখ।
- প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সাহিত্য, দর্শন, শিল্পবিজ্ঞান প্রভৃতি চর্চার ফলে সমসাময়িক সাহিত্য, দর্শন ও শিল্পকলায় তা আরো প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। ফ্লোরেন্স, রোম, ভেনিস প্রভৃতি স্থান রেনেসাঁ স্থাপত্যের প্রধান কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, মাইকেল এগুেলো প্রমুখ চিত্রকলায় নতুন রীতির প্রবর্তন করেন, পাশাপাশি জাতীয় ভাষা ও স্থানীয় ভাষা সাহিত্যের বিকাশ ঘটে। ষোড়শ শতকে ইটালিয়, ফরাসি, জার্মান, ইংরেজ ও স্প্যানিশ ভাষার উদ্ভব ঘটে।
- নবজাগরণের ফলে বিজ্ঞানচর্চায় এসেছিল গতি, বিজ্ঞান গবেষণার ফলে প্রাকৃতিক ঘটনার রহস্য অনুসন্ধান। ও মানবকল্যাণ সম্ভব হয়েছিল। পাশাপাশি মধ্যযুগের প্রচলিত অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারও। অনেকাংশে দূরীভূত হয়েছিল।
Read also:-
[Download] – ইউরোপের নবজাগরণ pdf – Read offline
upload soon…….!!
History of Europe e-Book Read also:-