হরপ্পা সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলির ভৌগলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করুন?
হরপ্পা সভ্যতার অবস্থান কোথায় ?
Mention the geographical location of significant centers of Harappan Civilization ?
উত্তরঃ-
১৯২২ খ্রিস্টাব্দে প্রসিদ্ধ বাঙালি প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলার ‘মহেঞ্জোদারো‘ নামক স্থানে কতগুলি উঁচু ঢিপির সন্ধান পান এবং খনন করে সেখানে ধ্বংসস্তূপ আবিষ্কার করেন। ঠিক একই সময়ে দয়ারাম সাহানি রাভি নদীর তীরে পাঞ্জাবে (বর্তমান পাকিস্তান) ‘মন্টোগোমারি’ জেলার হরপ্পাতে একই প্রকার ধ্বংসস্তূপ আবিষ্কার করেন। পরে তৎকালীন ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের Director, Sir John Marshall-র তত্ত্বাবধানে এইসব স্থানের খনন কার্য পরিচালিত হয়। এই প্রচেষ্টার ফলেই ভারতের উত্তর পশ্চিম প্রান্তে সিন্ধু নদের তীরে প্রাক্ আর্য যুগের এক সুমহান সভ্যতার সন্ধান পাওয়া যায়। এই সভ্যতা ভারতের ইতিহাসে সিন্ধু সভ্যতা বা বর্তমান হরপ্পা সভ্যতা নামে পরিচিত। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো এর মধ্যে কয়েকশো মাইলের ব্যবধান হলেও উভয়ই একই সংস্কৃতির অন্তর্গত। সুতরাং এই সভ্যতা কোন সংকীর্ণ স্থানে সীমিত নয় এবং কোন মতেই স্থানীয় বা অলৌকিক নয়।
পরবর্তীকালে দেশ ভাগ হওয়ার পর বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ননীগোপাল মজুমদার, পিগোট, হুইলার, ম্যাকে, ফ্রাংক প্রমূখ পন্ডিত গবেষক ও প্রত্নতত্ত্ববিদদের প্রচেষ্টায় বিভিন্ন জায়গা খনন করে এই সভ্যতার আরও নিদর্শন পাওয়া যায়, যেগুলির সঙ্গে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর নিদর্শনের সাদৃশ্য খুব বেশি। উদাহরণস্বরূপ – সিন্ধু প্রদেশের আমরি, চান-হু-দারো, কোটদিজি, নাল, বেলুচিস্তানের সুটকাগেনদোর সোটকাই, ডাবরকোট, গুজরাটের লোথাল, ধোলাভিরা রোজদি ও রংপুর, পূর্ব পাঞ্জাবের রুপার, বরো, সাংখোল, দাধেরি, সারায়াখোটর, হরিয়ানার বানাওয়ালি, মিটাথল, রাজস্থানের কালিবঙ্গাল, উত্তরপ্রদেশের মিরাট জেলার আলমগীরপুর এমনকি উত্তর ভারতের গঙ্গা উপত্যকায় এই সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। এই নিদর্শনগুলি থেকে অনুমান করা যায় যে, সমগ্র সিন্ধু ও পাঞ্জাব অঞ্চল, কাথিয়ার, আফগানিস্তান ও গাঙ্গেয় অববাহিকার কোন কোন অঞ্চলে এই সভ্যতা বিস্তার লাভ করেছিল। এছাড়া বক্সার, পাটনার বিভিন্নস্থানে পোড়ামাটির নিদর্শন আবিষ্কৃত হওয়ায় স্পষ্ট বোঝা যায় যে, পূর্ব ভারতের বিভিন্ন স্থানেও এই সভ্যতার প্রভাব বিস্তৃত ছিল।