ফিরে আসুক
ফুটবলীয় রুপকথা, ফিরে আসুক বিশ্বযুদ্ধের সেই : জয় হউক মানবতার, আরেকটি ফাল্গুন
আসুক ভালোবাসা, উষ্ণতা নিয়ে
কলমে – এহসান আহমেদ খান।
” শীতের হিমশীতল রুপ যত প্রকট হয়, বসন্তের আগমনী বার্তা তত নিকটবর্তী হয়।”
সময় নামক
মহাসমূদ্রের আরেকটি ঢেউ আমাদের ক্ষণিকের জন্য আবেশিত করে বিশালতায় হারিয়ে গেলো,
রয়ে গেলো আমাদের স্মৃতিপাতায়। ২০২২ আমাদের কাঁদিয়েছে, আমাদের হাঁসিয়েছে। আমাদের
অনেক অপ্রত্যাশিত আনন্দের মুহুর্ত উপহার দিয়েছে, আবার হৃদয়বিদারক অনেক বাস্তবতার সাথেও
আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সুখ, দুঃখ এই দুই পরশ পাথর নিয়েই আমাদের জীবন। তবে
দিনশেষে মধূর স্মৃতিগুলোকে হৃদয়ে আকড়ে ধরে আমাদের পাড়ি দিতে হবে নীল দড়িয়া, মনে
রাখতে হবে শেলীর সেই মহাকাব্যিক পঙ্গক্তি, ” শীতের হিমশীতল রুপ যত প্রকট হয়,
বসন্তের আগমনী বার্তা তত নিকটবর্তী হয়।” কাঠিন্যে ভরা ২০২২ সালটিতে একপশলা
বৃষ্টি হয়ে এসেছিল বিশ্বকাপ ফুটবল, তারপর ক্রিস্টমাসের রং রাঙ্গিয়েছে সবার হৃদয়।
এরকম মুহূর্ত আবার আসবে আমাদের জীবনে, সেই আশায় আমাদের জীবনের জয়গান গাইতে হবে.
এমনি একটা স্বপ্ন নিয়েই বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্বের মিত্র পক্ষ
এবং কেন্দ্রীয় শক্তির একদল সৈনিক, ফুটবল নিয়ে তারা গেয়েছিলেন জীবনের জয়গান।
২৪শে
ডিসেম্বর,১৯১৪। নিস্তব্ধ রজনী, যুদ্ধের
কালো থামা কেড়ে নিয়েছে জীবনের আনন্দ, ইউরোপ পরিণত হয়েছে এক বিরানভূমিতে, ক্রিসমাস
রাত্রীটাও হয়ে গেছে নির্জীব। রেনেসাঁসের সময় থেকে প্রগতি, শিল্প, বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় এক সম্বৃদ্ধ পৃথিবী উপহার
দেওয়া ইউরোপীয়ানরা মেতে উঠেছে রক্তলীলায়, মানব সভ্যতাকে ফেলে দিয়েছে হুমকির মুখে।
এক অজানা ভবিষ্যতের দিকে পারি জমাচ্ছে মানব সভ্যতা, নবযুগে এসে এরকম রক্তের
বৃষ্টিপাত দেখতে হবে তা হয়তো কেউ কল্পনাও করেনি। গুলি, বোমার শব্দে অভ্যস্ত হয়ে
যাওয়া ইউরোপের জন-জীবনে ক্রিস্টমাস মরুর বুকের মরীচিকা মাত্র। প্রাণহীন,
যুদ্ধবিধ্বস্ত মরুভূমিতে পরিণত হওয়া ইউরোপের বুকে ক্রিস্টমাসের ফুল ফুটিয়েছিল একদল
সৈনিক। স্থান ছিল ইউরোপের ককপীট খ্যাত বেলজিয়াম। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিখ্যাত
ওয়েস্টার্ণ ফ্রন্ট এর অন্তর্গত ছিল বেলজিয়াম। একপ্রান্তে ফ্রান্স, স্কটিশ, রাশিয়ান সৈনিকদের ফ্রন্ট আর
অন্যপ্রান্তে জার্মান, অস্ট্রো হাঙেরীয় সৈনিকদের ফ্রন্ট। দুই পক্ষই ক্লান্ত,
পরিশ্রান্ত, প্রিয়জনদের কথা চিন্তা করে মনটা বিষিয়ে আছে সবার! ক্রিসমাসের রাত অথচ
জীবনের আনন্দ নেই, মৃত্যু অপেক্ষা করছে খুব কাছে, জীবন এতো নিষ্ঠুর হয় কি করে! এমন
সময় কোন একপক্ষের ব্যারাক থেকে ভেসে আসতে শুরু করল বাঁশির সুর। অস্ত্রের পরিবর্তে
বাঁশরি বেঁজে উঠল। দুই পক্ষের মধ্যে চলল সুর সংগীতের আদান প্রদান। এরপর যুদ্ধের
বরফ গলে গেলো ক্রিস্টমাসের উষ্ণতায়। ব্যারাক থেকে বেরিয়ে অস্ত্র ছুঁড়ে ফেলে
শত্রুর সাথে কোলাকোলি করল তারা! একসাথে প্রার্থনা করলো, এমনকি সেই প্রার্থনা
সংগীতে অংশ নিয়েছিল ইহুদী সৈনিকেরাও। পরদিন সন্ধ্যা অবধি টিকে ছিল এই ভ্রাতৃত্ব।
আর ক্রিসমাসের সেই সূর্যোদয় যুদ্ধের ময়দানকে পরিণত করল খেলার মাঠে। ফুটবল নিয়ে এলো
হারিয়ে যাওয়া জীবনের আনন্দ। ফুটবল হয়ে উঠল ভ্রাতৃত্বের প্রতীক। দুই ফ্রন্টের
সৈনিকেরা ফুটবল নিয়ে মেতে উঠেছিল সেই ক্রিস্টমাসের সেই সকালটিতে। ফুটবল বিশ্বকাপ
এর আগমনী বার্তা তখনও শুনেনি বিশ্ববাসী, কিন্তু একদিন যে ফুটবল পৃথিবীকে একতাবদ্ধ
করব তার সৌন্দর্য্য দিয়ে তা হয়ত সেই প্রেরণা হয়ত সেই দিনটি দিয়ে গিয়েছিল। সংগীত,
ফুটবল, শিল্প যে পৃথিবীর মানুষকে আহবান করে সৌন্দর্যকে আলিঙ্গন করে ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতির
রংয়ে রাঙাতে কালে কালে তা যেন স্বয়ং ঈশ্বর বার বার হাজির করেছেন সবুজ মাঠে,
থিয়েটারে। আমরা চাইলেই পারি এই পৃথিবীটাকে সুন্দর করতে, আর অবশ্যই সেজন্য আমাদের
যুদ্ধ করতে হবে আর সেই যুদ্ধের অস্ত্র হবে ‘সৃজনশীলতা’, সহনশীলতা। ফেব্রুয়ারি মাস
ভালোবাসার মাস, শীতের তীব্রতা ধীরে ধীরে ক্ষীণ হচ্ছে আর বসন্তের আগমনী বার্তা বইতে
শুরু করেছে। এই সুন্দর পৃথিবীটা যে উপহার পেয়েছি এর পেছনে আছে হাজারো বিজ্ঞানী,
দার্শনীক, চিন্তাবিদ, শিল্পীর নিবেদন, সৃষ্টিশীলতার পরশ, তাকে তো আরেকটু সুন্দর
করাই যায়!
এই সুন্দর পৃথিবীটা যে উপহার পেয়েছি এর পেছনে আছে হাজারো বিজ্ঞানী, দার্শনীক, চিন্তাবিদ, শিল্পীর নিবেদন, সৃষ্টিশীলতার পরশ, তাকে তো আরেকটু সুন্দর করাই যায়!
নানা রঙের ইতিহাসে স্বাগতম। পাঠকের জন্য শুভকামনা।আমরা ইতিহাস নিয়ে কাজ করে থাকি। ইতিহাস নিয়ে কোন প্রশ্ন নিয়ে আমাদের সাথে আলোচনা করতে, আমাদের Whasapp Group & Telegram Channel এ যোগ দিন।