মহেঞ্জোদারোতে আবিষ্কৃত কয়েক হাজার বছর পুরনো মুদ্রা ইতিহাসের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে?

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now
Instagram Group Join Now

মহেঞ্জোদারোতে আবিষ্কৃত কয়েক হাজার বছর পুরনো মুদ্রা ইতিহাসের ধারাকে নতুন মোড় দেবে?

প্রাচীন মহেঞ্জোদারো সভ্যতার নতুন রহস্য

সিন্ধু নদের তীরে অবস্থিত প্রাচীন মহেঞ্জোদারো সভ্যতাকে নিয়ে রহস্য আজও অব্যাহত। এই সভ্যতার ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে আমরা এখনও অনেক কিছু জানতে পারিনি। সম্প্রতি, পাকিস্তানে মহেঞ্জোদারোতে পরিচালিত খননকার্যের ফলে আবিষ্কৃত হয়েছে হাজার দুয়েক বছর পুরনো তাম্রমুদ্রার (Copper coin)। এই আবিষ্কার নতুন করে লিখতে সাহায্য করতে পারে মহেঞ্জোদারোর ইতিহাসকে।

সিন্ধু প্রদেশের এই শহরটিকে ধরে নেওয়া হয় পৃথিবীর প্রাচীনতম পরিকল্পিত নগর রূপে। রাস্তাঘাট, বাড়ির কাঠামো, এমনকি নিকাশি ব্যবস্থাও নির্মিত হয়েছিল নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে। যে সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ গুহায়, জঙ্গলে আদিম জীবনযাপন করছে, তখন ভারতের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে মহেঞ্জোদারোর বাসিন্দারা বাস করত পোড়া মাটির তৈরি বাড়িতে। যার বিশেষ খ্যাতি ছিল শস্যভাণ্ডার ও স্নানাগারের নির্মাণ কৌশলের জন্য।

গত ১৫ নভেম্বর, মহেঞ্জোদারো নগরের পশ্চিম প্রান্তে খননকালে সন্ধান মেলে মাটির পাত্রে রাখা অসংখ্য তাম্রমুদ্রার। খননকার্যের কর্মীরা অবশ্য প্রথমে এর গুরুত্ব বুঝতে পারেননি, ফলে আবিষ্কার করার পরেও ফের মাটি চাপা দিয়ে দেওয়া হয় মাটির পাত্রটিকে। পরে ১৫ ফুট গভীরতা থেকে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় অত্যন্ত সাবধানে তুলে আনা হয় পাত্রটি। যদিও সেটির অধিকাংশই ভেঙেচুরে গেছে। কিন্তু মুদ্রাগুলি এতটাই প্রাচীন যে, আঠার মতো সেগুলি লেগে রয়েছে একে-অপরের সঙ্গে। ফলে পাত্রটি ভাঙলেও তার আকার রয়ে গেছে।

অনুমান করা হচ্ছে, এই মুদ্রাগুলিও কুষাণ আমলের। কিন্তু সম্পূর্ণ রূপে পরিষ্কার করে, গবেষণাগারে পরীক্ষা ছাড়া স্পষ্ট মতামত দিতে নারাজ মহেঞ্জোদারোর প্রত্নতাত্ত্বিক দল।

তবে একাধিক প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে চতুর্থ শতাব্দীর মধ্যে তৈরি হতে পারে মুদ্রাগুলি। সেই সময় কুষাণ সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন প্রথম বসুদেব। একইভাবে, ৯৩ বছর আগে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় যে ২০০০ মুদ্রা আবিষ্কার করেছিলেন, তার মধ্যে ৩৩৮টি ছিল বসুদেবের সময়ের।

এবারও আশাবাদী ইতিহাসবিদরা। মোট মুদ্রার সংখ্যা এখনই বলা সম্ভব না হলেও, পাত্রটির ওজন প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলো। তবে একটা বিষয়ে নিশ্চিত তাঁরা। সাধারণত মহেঞ্জোদারো সভ্যতাকে খ্রিস্টপূর্ব দু’হাজার বছর নাগাদ সময় থেকে অবলুপ্ত বলে ধরা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক আবিষ্কার উসকে দিচ্ছে এক নতুন সম্ভাবনার কথা। তাহলে কি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার পরেও নিত্য যাতায়াত ছিল মানুষের? কুষাণ সাম্রাজ্যের অধিপতিরা কি কোনো বিশেষ কাজে ব্যবহার করতেন এই অঞ্চলকে? ফলে পুরোপুরি ‘অবলুপ্ত’, বলার ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার ভাবছেন সংশ্লিষ্ট প্রত্নতাত্ত্বিকরা। ইতিমধ্যে, ফের শুরু হয়েছে খননকার্য। এখন দেখার নতুন কোন রহস্য অপেক্ষা করে থাকে ঐতিহাসিক এই নগরে…

এই আবিষ্কারের ফলে মহেঞ্জোদারো সভ্যতার ইতিহাসের নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে। এই আবিষ্কারের মাধ্যমে আমরা আরও জানতে পারব এই সভ্যতার সম্পর্কে, এবং এর প্রভাব সম্পর্কে।

Leave a Reply