Question:- Do you think that 18th Century India was a Dark Age? How do you justify the statement? | Nana Ronger Itihas
প্রশ্নঃ- আপনি কি মনে করেন যে অষ্টাদশ শতক ভারতে একটি অন্ধকার যুগ ছিল? আপনি কী এই বক্তব্যকে ন্যায়সঙ্গত মনে করেন? | নানা রঙের ইতিহাস
উত্তরঃ-
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রকৃত অর্থে অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল কিনা এ বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যেমন মতভেদ আছে, ঠিক তেমনই অষ্টাদশ শতাব্দীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল ব্যাখ্যা করতে গিয়েও দ্বিধা ও দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় যে এই যুগসন্ধিক্ষণের শতাব্দি প্রকৃত অর্থে অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল কিনা। 1707 ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মোগল সাম্রাজ্য দ্রুত অবক্ষয় ও পতনের দিকে এগিয়ে যায়। 1739 খ্রিস্টাব্দে নাদির শাহের ভারত আক্রমণ, দিল্লি লুণ্ঠন, এবং প্রকৃত অর্থে সাম্রাজ্যের ভাঙ্গন ত্বরান্বিত করেছিল দেশের অভ্যন্তরের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা কে। এই বিশৃংখলার সাথে যুক্ত ছিল জায়গিরদারী, কৃষি সংকট এবং তুলনামূলকভাবে আভ্যন্তরীণ শিক্ষা ও বাণিজ্য মন্দা। যদিও ইউরোপীয় বণিকদের আগমনের ফলে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বহির্বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি লাভ করেছিল। 1757 খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পত্তনের পর ভারতে কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের ফলে পুনরায় মন্দাবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। তাছাড়া, সার্বিকভাবে অষ্টাদশ শতাব্দী বিভিন্ন দিকের অবক্ষয়ের ইঙ্গিত বহন করে।
অষ্টাদশ শতাব্দীতে বাস্তবে মোগল সাম্রাজ্যের পরিসমাপ্তি ঘটে। যদিও শেষ মোগল বাদশাহ ক্ষমতাচ্যুত হন 1857 খ্রিস্টাব্দে দাক্ষিণাত্য মহীশূর ও নিজামের রাজ্য এবং উত্তর ভারত সংযোগস্থলে মারাঠারা মোগল সাম্রাজ্যের দুর্বলতা কে কেন্দ্র করে প্রকৃত অর্থে নিজ নিজ অঞ্চলে স্বাধীন হয়ে যায়। উত্তর ভারত ও বাংলার নবাব, অযোধ্যার নবাব, রহিল খন্ডের শাসক বস্তুতপক্ষে ক্ষয়িষ্ণু মোগল সাম্রাজ্যের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজ নিজ অঞ্চলের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ফলে দেখা দেয় আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অচলাবস্থা। পাঞ্জাব অঞ্চল শিখ মিসলও আফগানিস্তানের দখলে চলে যায়। এমতাবস্থায় আফগান অধিপতি আহম্মদ শাহ আবদালি মারাঠাদের শক্তি খর্ব করতে 1761 খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এই যুদ্ধে মারাঠা সর্দারদের অনৈক্য মারাঠা জাতির পতনের অন্যতম কারণে পরিণত হয় এবং বাস্তবিক অর্থে মারাঠাদের শক্তি খর্ব হলে ভারতবর্ষে এক রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দেয়। এই শূন্যতার সুযোগে ভারতে পরাক্রমশালী ব্রিটিশ শক্তির প্রতিষ্ঠা সুনিশ্চিত হয় এবং শুরু হয় ভারতের পরাধীনতা। সেকারণে রাজনৈতিক পতনের গুরুত্ব বিচারে অষ্টাদশ শতাব্দীর ছিল এক ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ’ ।
সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক বিচারেও অষ্টাদশ শতাব্দী ছিল যুগসন্ধিক্ষণ ও অবক্ষয়ের যুগ। যদিও এই অবক্ষয় উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের কারণ ও পেক্ষাপট তৈরি করেছিল। 1757 খ্রিস্টাব্দের পর ভারতে দেশীয় শিল্পের ক্রমঃ অবক্ষয় সূচিত হয়। ইংরেজদের একচেটিয়া বাণিজ্যের ফলে ভারতীয় দ্রব্যের ও শিল্পজাত পণ্যের বাজার তলানিতে এসে পৌঁছয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে ইংল্যান্ডে শিল্পের ক্ষেত্রে ইংরেজ বণিকরা ভারতীয় শিল্পজাত দ্রব্যাদি কিনতে অনীহা প্রকাশ করে এবং এর সাথেই শুরু হয় ভারত থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে ইংল্যান্ডে রপ্তানি করা। এর মাধ্যমেই শুরু হয় কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ। যার ফলে ভারতে হয়েছিল কৃষির চূড়ান্ত অবক্ষয়। শিল্পজাত কাঁচামাল রপ্তানি করা হলে দেশীয় শিল্পের অবক্ষয় এক চূড়ান্ত মাত্রা পেয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ভারতে অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণ নিহিত ছিল অষ্টাদশ শতাব্দীর অবক্ষয়ের সূচনার মধ্যে। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আরো জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল কারণ, পাশ্চাত্যের প্রভাবে ভারতীয়দের মনে সাংস্কৃতির নিরাপত্তার সংকট দেখা দেয়। যদিও সময়ান্তরে এই প্রভাব সুদুরপ্রসারি হয়ে ভারতের নবজাগরণের গতি এনেছিল। তবে, সাংস্কৃতিক দিক বিচারে অষ্টাদশ শতাব্দীর ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগ’ না হয়ে যুগসন্ধিক্ষণের যুগে পরিণত হয়েছিল। যার ফলে সম্ভব হয়েছিল উনবিংশ শতাব্দীর নতুন সূচনা।