Join Whatsapp Group

Join Telegram Group

[ New ] আলাউদ্দিন খলজির বিপণন নিয়ন্ত্রণ নীতি [ Alauddin Khalji ]। Nana Ronger Itihas

 

আলাউদ্দিন খিলজি
আলাউদ্দিন খলজির বিপণন নিয়ন্ত্রণ নীতি আলোচনা কর।  কি উদ্দেশ্যে এই নীতি প্রবর্তিত হয়েছিল এবং এর ফলাফল কি হয়েছিল?
[ Discuss the policy of market control of Ala-ud-din Khalji. Why where they introduced and with what effects? ]
আলাউদ্দিন খলজি কেন ও কীভাবে মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রবর্তন করেন তা আলোচনা করো। 
[Discuss why and how Alauddin Khalji introduced price control policy.]
আলাউদ্দিন খিলজি মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতি
আলাউদ্দিন খিলজি বাজারদর নিয়ন্ত্রণ নীতির মূল উদ্দেশ্য
আলাউদ্দিন খলজির অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আলোচনা করো

উত্তর:-

সূচনা: নানা দিক থেকে আলাউদ্দিন খলজির শাসনকালের ঔজ্জ্বল্য আছে। শুধু যুদ্ধ নয়, শাসন সংগঠনেও তিনি মৌলিকতার পরিচয় দেন। আলাউদ্দিনের প্রশাসনের একটি অভূতপূর্ব দিক ছিল মূল্য নিয়ন্ত্রণ বা বাজারদর নিয়ন্ত্রণ নীতি।

বাজারদর নিয়ন্ত্রণ :

1. আলাউদ্দিন খলজির শাসনব্যবস্থা পুরোপুরি সামরিক বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল ছিল। এজন্য তিনি এক বিরাট সৈনাদল গঠন করেছিলেন। তিনি সৈন্যদের স্বল্প বেতন দিতেন। স্বল্প বেতনে সেনাবাহিনী যাতে জীবনধারণ করতে পারে এজন্য তিনি বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রচলন করেন।
2. তাছাড়া আলাউদ্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্রের বাজারদরকে নিয়ন্ত্রণে রেখে মুদ্রাস্ফীতি রোধে সচেষ্ট হয়েছিলেন। অভিজাতদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ ও দাক্ষিণাত্য থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থাগমের ফলে সুলতানি রাজ্যের কেন্দ্রস্থল দিল্লি ও তার সন্নিহিত অঞ্চলে মুদ্রাস্ফীতির ব্যাপারটা সহজেই অনুমান করা যায়। তঙ্কার মূল্য কমে যাওয়ার ফলে দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। 
3. জনসাধারণের কাছে ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ করাও তাঁর লক্ষ্য ছিল।

কার্যকারী ব্যবস্থা:

 আলাউদ্দিন খলজি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ যা বাজারদর নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রচলনের জন্য কতকগুলি নিয়মকানুন তৈরি করেন। সম্ভবত উৎপাদন মূল্যের ওপর নির্ভর করে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।
1. আলাউদ্দিন ব্যবহার্য সমস্ত জিনিসেরই দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিলেন। গম, চাল, বাজরা, বিভিন্ন প্রকার ডাল, গুড় ও চিনি, তেল, ঘি প্রভৃতি জিনিসের মূল্য স্থির করে দেওয়া হয়। এমনকি গবাদি পশু, ঘোড়া, ক্রীতদাস প্রভৃতির দামও বেঁধে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও শাকসবজি, জামাকাপড় প্রভৃতির বিক্রয়মূল্যও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল।
2. বণিকদের দূরপ্রান্ত থেকে জিনিসপত্র আমদানি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। 
3. আলাউদ্দিন বিভিন্ন দ্রব্যের দামের তালিকা তৈরি করেন। কোনো ব্যবসায়ী যাতে তালিকার চেয়ে অধিক মূল্য নিতে না পারে আলাউদ্দিন তার ব্যবস্থা করেন এবং আইন ভঙ্গ করলে কঠোর শাস্তি প্রদানের প্রথা চালু করেন।
4. আলাউদ্দিন খলজির নির্দেশে সমস্ত ব্যবসায়ীদের দিল্লিতে ব্যাবসা করার জন্য নাম নথিভুক্ত করতে হত। 
5. আলাউদ্দিনের নির্দেশ অনুসারে প্রত্যেক অভিজাত যা রাজকর্মচারীকে দামি জিনিস কেনবার আগে ‘সাহানা-ই-মাণ্ডি’র কাছে তাদের নাম-ঠিকানা নথিভুক্ত করতে হত। ‘দেওয়ান-ই-রিয়াসৎ’ নামে কর্মচারীরা ‘সাহানা-ই-মাণ্ডি দের সঙ্গে যুগ্মভাবে দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন।
6. দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত বণিকরা দিল্লি অঞ্চলে এসে নির্দিষ্ট দামে জিনিসপত্র বিক্রয় করতে বাধ্য ছিল।
7. দোয়াব অঞ্চলের কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব হিসেবে একমাত্র শস্যই নেওয়া হত। এইসব শস্য মজুত থাকত দিল্লির বিভিন্ন গুদামে। সরকার ব্যতীত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফসল মজুত করা নিষিদ্ধ ছিল। এর ফলে দুর্ভিক্ষ হলেও শস্যের দাম বৃদ্ধি পেত না। দুর্ভিক্ষের সময় দু-জন ক্রীতদাসসহ প্রতি পরিবারকে আধমন করে খাদ্যশস্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা হত। প্রকৃতপক্ষে ‘রেশনিং ব্যবস্থার প্রবর্তন আলাউদ্দিন খলজির এক অভিনব কীর্তি।
৪. কয়েকটি ন্যায্যমূল্যের বাজার স্থাপন করা হয়। 

ফলাফল: 

ফেরিস্তা সুলতানের মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতির প্রশংসা করেছেন। কিন্তু  অধ্যাপক পি শরণ ও কে এস লাল সুলতানের মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন। আলাউদ্দিনের বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ফলে সৈন্যদের সঙ্গে সাধারণ ক্রেতাগণ ও উপকৃত হয়েছিল। কিন্তু উৎপাদকগণ কম দাম পাবার ফলে ক্ষুখ হয়েছিল। এই বাজার নিয়ন্ত্রণ বাণিজ্য ও কৃষির দিক দিয়ে যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছিল। বণিকদের ক্ষেত্রে যে সামান্য হারে মুনাফা নির্দিষ্ট করা হয় তাতে তাদের বাণিজ্যে উৎসাহ কমে যায়। বণিকদের স্ত্রী ও সন্তানদের দিল্লিতে জোর করে আটকে রাখা হত। যাতে বণিকেরা নিয়মিতভাবে দিল্লির বাজারে মাল সরবরাহ অব্যাহত রাখে। যে কৃষকেরা ভূমিরাজস্ব হিসেবে উৎপন্ন শস্যের অর্ধেক দিত তাদেরই আবার কম দামে শস্য বিক্রি করতে বাধ্য করা হত। অথচ দিল্লিতে গিয়ে কম দামে জিনিস কেনার অধিকার তাদের ছিল না। দিল্লির বাইরে থেকে বেশি দামে তাদের জিনিস কিনতে হত। মনে রাখা উচিত যে, বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কেবলমাত্র দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেই সীমাবন্ধ ছিল। রাজধানী দিল্লিকে সুখে রাখার জন্য গ্রামাঞ্চলকে নিঃস্ব করে দেবার নীতিই আলাউদ্দিন নিয়েছিলেন। ড. কে এস লাল বলেন যে, আলাউদ্দিনের মৃত্যুর পর তাঁর মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতি ভেঙে পড়ে। এসব বিরোধী সমালোচনা সত্ত্বেও বলা যায় যে আলাউদ্দিন সৈন্যবাহিনী ও জনগণের মঙ্গলের জন্য তাঁর বিস্তৃত বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গঠন করেন। নির্দিষ্ট মূল্যমান বজায় থাকলে সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক সকলে লাভবান হয়। সুলতান যতদিন জীবিত ছিলেন তাঁর বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জনগণকে অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দিয়েছিল।

Leave a Comment