Join Whatsapp Group

Join Telegram Group

[New] ইলতুৎমিশ (Iltutmish) । Nana Ronger Itihas। PDF [Download]

 

 

ইলতুৎমিশের সময় দিল্লির সুলতানি এর বিস্তার সুদৃঢ়ীকরণ আলোচনা কর? (Discuss the strengthening of the Sultanate of Delhi during Iltutmish?)

ইলতুৎমিসের কীর্তির বিচারমূলক আলোচনা করো । (Estimate the achievements of Iltutmish. )

উত্তর:- যে রাজবংশকে দাসবংশ বলা হয় তার প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা; আইবকের স্বল্প কালের রাজত্বে তিনি এই বংশকে দৃঢ়মূল করে যাওয়ার সময় পান নি। তাঁর মৃত্যুর পরে নতুন নেতা হলেন ইলবারি অঞ্চলের এক তুর্কী, যিনি, মিনহাজউস্-সিরাজের মতে, “No king so benevolent, sympathetic reverent to the learned and the old, ever rose by his own efforts to the cradle of empire.”  ইলতুৎমিস  শৈশবেই  গজনীতে নীত হয়েছিলেন। সেখানে আইবক তাঁকে  ক্রয় করেন ও দিল্লী নিয়ে যান। আইবক তাকে তার দেহরক্ষীদের প্রধান করেন ও পরে ১১৯৬ খ্রীস্টাব্দে, তাকে গােয়ালিয়রের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। মহম্মদ ঘােরীর সঙ্গে আইবকের সম্বন্ধ যেমন ছিল, আইবকের সঙ্গে ইলতুৎমিসের সম্বন্ধও তেমন ছিল। আইবক ইলতুৎমিসকে পুত্রের মতই দেখতেন ও যখন আইবকের নিজের পুত্র আরমশাহ শাসনকার্যে সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত বলে প্রমাণিত হলেন, তখন সৈন্য বাহিনীর প্রধানেরা  ইলতুৎমিসকে রাজ্যভার গ্রহণ করতে অনুরােধ করলেন।

 

ইলতুৎমিস-এর সুলতান হওয়ার সময় দিল্লীর সুলতানী রাজ্য তার অস্তিত্বই প্রায় হারাতে বসেছিল। রাজ্য তখন দিল্পী ও বাদাউন এবং পূর্বে বারাণসী থেকে পশ্চিমে শিবালিক পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। পাঞ্জাব তখন ইলতুৎমিসের বিরুদ্ধে। কুবাচা, মুলতানের অধিপতি, তাঁর রাজ্যের মধ্যে ভাতিণ্ডা, কুরাম ও সরসুতি অন্তভূক্ত করে নিয়েছিলেন। আরম শাহ ও ইলতুৎমিসের মধ্যে বিবাদের সুযােগ নিয়ে কুবাচা লাহাের পর্যন্ত দখল করেছিলেন। বাংলা ও বিহার দিল্লীর সঙ্গে সম্বন্ধ ছিন্ন করেছিল। লখনৌতে আলী মর্দান নিজেকে স্বাধীন রাজা বলে ঘােষণা করেছিলেন। যে রাজপুত রাজারা মহম্মদ ঘােরী ও কুতুবউদ্দিনের দ্বারা পরাজিত হয়েছিলেন তাঁরা কর প্রদান করে আনুগত্য স্বীকার করতে অসম্মত হলেন। জানলার ও রণথম্ভোর স্বাধীন হয়ে গেল। এমনকি, আজমীর, গােয়ালিয়র ও দোয়াব তুর্কিদের  অধীনতা পাশ ছিন্ন করল। তাজুদ্দীন ইয়েদিজ পুনরায় হিন্দুস্থানের উপর প্রভুত্বের দাবি উপস্থিত করলেন। দিল্লীর অবস্থাও চক্রান্তপূর্ণ ছিল। সুলতানী রক্ষী বাহিনীর একটা অংশ আরম শাহের দলের সঙ্গে মিত্রতায় আবদ্ধ হয়ে বিদ্রোহ করল। কিন্তু আসন্ন যে মহাঝঞ্চার সংকেত আসছিল তার কাছে এসব কিছুই নয়। এক নূতন ধারণাতীত বিপদ সমস্ত এশিয়ার সম্মুখে দেখা দিয়েছিল।

 

চেঙ্গিসের সৈন্যদল পঙ্গপালের মত শুষ্ক পার্বত্য প্রান্তর ছেয়ে ফেলছিল। মােঙ্গলদের অগ্রগতির প্রথম বার্তা ভারতে পৌছল, যখন এই বিজয়ী বর্বরদের তাড়নায় সন্ত্রস্ত হয়ে খােয়ারিজমের শাহ তাঁর ভগ্ন বাহিনী নিয়ে গজনির ইয়েলদিজের উপর ঝাঁপিয়ে  পড়লেন এবং পলায়নপর ইয়েলদিজ ভারতে প্রবেশ করলেন। খােয়ারিজমের শেষ শাহ জালালুদ্দীন, যুদ্ধ করতে করতে পশ্চাৎপদ হয়ে সিন্ধু নদের তীরে উপস্থিত হলেন। সেখানেও চেঙ্গিস তাঁকে অনুসরণ করে এসে পরাজিত করলেন, কিন্তু জালালুদ্দীন পরাজয় স্বীকার না করে সিন্ধুদেশের অভ্যন্তরে পালিয়ে গেলেন।

 

আলােড়ন হয়েছিল প্রচণ্ড, কিন্তু ঝড় যেমন দ্রুতগতিতে এসেছিল তেমন দ্রুতগতিতে চলে গেল। মােঙ্গলরা ভারতে শীত কাটিয়ে ফিরে গেল ; ভারতের ভাগ্য ভাল যে তাদের দৃষ্টি তখন পশ্চিমের দিকে নিবদ্ধ ছিল। আইবকের প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়েদিজ ও কুবাচা ইতিহাসের মঞ্চ থেকে অন্তর্হিত হলেন। প্রথম জন বন্দীদশায় মারা গেলেন। কুবাচা মােঙ্গলদের ও খােয়ারিজমীদের সঙ্গে অনেক সংঘাতের পরে ইলতুৎমিসের কাছে তার প্রধান শহরগুলি হারালেন এবং অবশেষে, ১২৩০ খ্রীস্টাব্দে, হতাশায় মরীয়া হয়ে সিন্ধুনদের জলে ডুবে মরলেন। এর পূর্বেই ১২২৫ খ্রীস্টাব্দে দিল্লীর সুলতান তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে বাংলায় গিয়েছিলেন, সেখানকার শাসনকর্তা হুসামুদ্দান এয়াজ তাঁর আনুগত্য স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু কয়েক বৎসর পরেই বাংলা আবার স্বাধীনতা ঘােষণা করল। সেজন্য ১২৩০ খ্রীস্টাব্দে ইলতুৎমিস বাংলার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় বার অভিযান করতে বাধ্য হলেন। বাংলার শাসক, বলকা খলজি, পরাজিত ও নিহত হলেন এবং বাংলা সুলতানী রাজ্যের পুনভুক্ত হল। ইলতুৎমিস বিহারকে বাংলা থেকে বিশ্লিষ্ট করলেন এবং দুই প্রদেশের জন্য পৃথক্‌ পৃথক্ শাসনকর্তা নিযুক্ত করলেন। রাজপুতানার বিদ্রোহী রাজ্যগুলির একই দশা হল। মােঙ্গল আক্রমণের আশঙ্কা অন্তর্হিত হওয়া মাত্র ইলতুৎমিস তার সৈন্যবাহিনীকে সক্রিয় করলেন এবং পুনর্বিজয়ের কাজ আরম্ভ করলেন। তিনি রণথম্বাের, মন্দোর, জালর, বায়না, ঠাঙ্গির, নাগাের ও গােয়ালিয়র পুনরায় দখল করলেন। বদৌর, কনৌজ ও বারাণসীর মত গুরুত্বপূর্ণ। স্থান সহ দোয়াব অঞ্চল পুনরাধিকৃত হল। এইভাবে আইবকের সকল রাজ্যই তার ক্রীতদাসের হাতে এল। ১২৩৪ খ্রীস্টাব্দে মালব দেশে উজ্জয়িনী পর্যন্ত অভিযানের ফলে বিন্ধ্য পর্বতমালার উত্তরে সমগ্র ভারতে ইলতুৎমিসের আধিপত্য স্থাপিত হল।

 

ইলতুৎমিসের অবিমিশ্র সাফল্যময় কর্মজীবনের চরম স্বীকৃতি তখন হল, যখন ১২২৯ খ্রীস্টাব্দে বাগদাদের খলিফা তাঁকে ভারতের সার্বভৌম অধিপতি হিসাবে অনুমােদন করে ঐ পদের আনুষ্ঠানিক পােশাক তাঁকে অর্পণ করার জন্য তাঁর কাছে রাজকীয় দূত পাঠালেন। এর পরে রাজা তার মুদ্রার উপরে শুধু “The mighty Sultan, Sun of the Empire and the Faith, conquest-laden Iltutmish, but also aid of the commander of the faithful, Nasir Amir-al-Muminin.”  যে বৃহৎ রৌপ্যমুদ্রা গুলিতে এই কথাগুলি উৎকীর্ণ থাকত সেগুলিই তখন হল ভারতের প্রচলিত মুদ্রা। | তিনিই ভারতের প্রথম মুসলিম রাজা যিনি কেবল আরবি ভাষায় উৎকীর্ণ মুদ্রার প্রচলন করেছিলেন, যে ধরনের মুদ্রা পশ্চিম দেশগুলিতে বহু পূর্ব থেকেই প্রচলিত ছিল। বার্নিয়ানের বিরুদ্ধে অভিযান চালানাের কালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অভিযান বন্ধ করে অসুস্থ অবস্থায় তিনি দিল্লী ফেরেন। চিকিৎসকেরা তাঁর আরােগ্য বিধান করতে অসমর্থ হন এবং তিনি ১২৩৬ খ্রীস্টাব্দে, তার প্রাসাদে দেহত্যাগ করেন।

 

ইলতুৎমিসের শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব হল একটি রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করা এবং তার সাহায্যে বিজিত অ-সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলিকে রাজনৈতিক এতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা। সুলতানী রাজ্যের স্বতন্ত্র সত্তা রক্ষা করা এবং বিশেষতঃ, এশিয়ায় যখন চেঙ্গিস্ খাঁর তাণ্ডব আরম্ভ হল তখন সুলতানী রাজ্যের গােড়ার দিকে মধ্য এশিয়ার সঙ্গে তার যে যােগ ছিল তার পরিণাম এড়িয়ে যাওয়া, খুবই কঠিন ছিল, কিন্তু অত্যন্ত দূরদর্শিতা ও নিপুণতার সঙ্গে ইলতুতমিস এই কাজ সম্পন্ন করেছিলেন। যিনি এককালে ক্রীতদাস ছিলেন, কিন্তু কেবল অসাধারণ দক্ষতার বলে মসনদে বসার প্রায় অলঙ্ঘনীয় অধিকার অর্জন করেছিলেন এবং ১২২৯ খ্রীস্টাব্দে খলিফা কর্তৃক আনুষ্ঠানিক অভিষেক, তাঁর বংশ ও রাজ্য যে প্রতিষ্ঠালাভ করেছিল, তারই অনুমােদন মাত্র। আইবক যে মূল রেখাগুলি অঙ্কন করেছিলেন সেগুলির উপর কাজ করে ইলতুৎমিস একটি সামরিক রাজ্যের চিত্র সম্পূর্ণ করেছিলেন, এবং সেই রাজ্যের তিনিই ছিলেন প্রথম রাজা। তিনি কেবল তার পূর্ব প্রভুর রাজ্যগুলি নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেন নি, সেগুলির সঙ্গে মালব ও সিন্ধুদেশও যােগ করেছিলেন।

 

 

ড. হবিবুল্লার মতে, তার রাজত্ব উল্লেখযােগ্যভাবে সফল ছিল। তিনি আইবকের অসমাপ্ত কাজ শেষ করার ভার নিয়েছিলেন এবং, প্রবল প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও দুর্বল ভিত্তির উপরেই একটা রাজত্ব গড়ে তুলেছিলেন, রাজ্যের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে যথেষ্ট কূটনৈতিক কুশল তার প্রয়ােজন হয়েছিল। তার গঠনমূলক রাষ্ট্রনীতি জ্ঞানের একটা পরিচয় এই যে, একজন পূর্বতন ক্রীতদাস হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁর মসনদ তার পুত্রদের জন্য রেখে যেতে পেরেছিলেন। বৈদেশিক ব্যাপারের পরিচালনায় তিনি যথেষ্ট বাস্তব জ্ঞান, দৃঢ়তা ও দূরদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। যে মােঙ্গলরা অধিকতর ক্ষমতাশালী প্রাচীন অনেক সাম্রাজ্যের মূলােচ্ছেদ করেছিল, সেই মােঙ্গলদের ভয়াবহ আক্রমণ থেকে ত্রাণ করেছিলেন বলে মধ্যধূগীয় ভারত ইলতুৎমিসের কাছে ঋণী। তাঁর দৃঢ় ও দক্ষ সক্রিয়তার ফলে রাজ্য সংহত হয়েছিল ও তার প্রথম অবস্থাতেই খণ্ডে খণ্ডে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে রক্ষা পেয়েছিল। রাজপুতদের বিরুদ্ধে তাঁর অগ্রসর হওয়ার নীতি সার্থক হয়েছিল এবং এর ফল যা হয়েছিল তার নৈতিক মূল্যও কম ছিল না। এই নীতি ছিল নব-স্থাপিত মুসলিম রাজ্যের প্রতি হিন্দুদের প্রথম বিরােধিতার উপযুক্ত উত্তর। মুইজুদ্দীনের বিজিত অঞ্চলগুলি পুনরায় দখল করা ছাড়াও, রাজপুতানায় ও গঙ্গোত্তর প্রদেশেও তার উল্লেখযােগ্য অগ্রগতি হয়। বিচক্ষণতার সঙ্গে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আপস-মীমাংসা করে তিনি নৈতিক বিরােধিতার দূর করেন ; এদিকে সামরিক শ্রেণীর লােকেরা তাঁর রাজ্যবৃদ্ধির পরিকল্পনার ফলে প্রচুর ঋণ ও গৌরব অর্জন করার সুযােগ পেয়ে খুশি হয়। শুধু তাঁর  রাজমুকুট বা বংশ নয়, ভারতে মুসলিম রাজ্যই তখন চরম অনুমােদন লাভ করল, যখন বাগদাদের আব্বাসিদ খলিফা আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে ইসলামী রাজার ক্ষমতায় ভূষিত করলেন। এইভাবে আইবকের উদ্দেশ্য শেষ পর্যন্ত কার্যে পরিণত হল এবং দিল্লী রাজ্য বিধিসম্মত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করল। ইলতুৎমিসকে মহান বলে বর্ণনা করা নিঃসন্দেহে অতিরঞ্জন করা হবে, তবে তিনি অসাধারণ সুদক্ষ শাসক ছিলেন এবং সুলতানী ক্রিয়াকলাপের সকল বিভাগের উপরেই তার ছাপ রেখে গিয়েছিলেন। তার মৃত্যুর অনেক পরে যখন তার বংশের চিহ্নও ছিল না, তখনও লােকে তাঁর সমৃদ্ধিশালী গৌরবময় রাজত্বের দিকে ফিরে তাকাত। আইবক দিল্লীর সুলতানী রাজ্যের ও তার সার্বভৌম মর্যাদার মূল রেখাগুলি অঙ্কন করেছিলেন সত্য, কিন্তু অবিসংবাদিতভাবে, ইলতুৎমিসই এই রাজ্যের যথার্থ প্রথম রাজা।

 
নানা রঙের ইতিহাসে স্বাগতম। পাঠকের জন্য শুভকামনা। এই নোটটি ইতিহাস অনার্স ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আদর্শ নোট। এই নোটটি নির্দ্বিধায় পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ব্যাবহার করতে পারেন। 
আমরা ইতিহাস নিয়ে কাজ করে থাকি। ইতিহাস নিয়ে কোন প্রশ্ন নিয়ে আমাদের সাথে আলোচনা করতে, আমাদের Whasapp Group & Telegram Channel এ যোগ দিন।

মধ্য ভারতের ইতিহাসের অন্যান্য বড় প্রশ্ন উত্তরঃ-

1. সুলতানীর পতন ও মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা

2. 

3. সুলতানি যুগের স্থাপত্য

4. ভক্তি আন্দোলন

5. শেরশাহের শাসন ব্যবস্থা

6. শিবাজীকে কি মধ্যকালিন ভারতের সর্বশ্রেষ্ট

7. দাক্ষিণাত্য ক্ষত

8. আলাউদ্দিন খিলজি বাজারদর নিয়ন্ত্রণ

9. আকবরের রাজপুত নীতি

10. জায়গিরদারি সঙ্কট

Leave a Comment