Join Whatsapp Group

Join Telegram Group

[PDF] আকবরের ধর্মনীতি | NANA RONGER ITIHAS

 



আকবরের
ধর্মনীতি PDF
আকবরের
ধর্ম নীতি উপসংহার
আকবরের
ধর্মীয় নীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো
রাষ্ট্র
ও ধর্ম সম্পর্কে আকবরের অবস্থান
আকবরের
ধর্মীয় নীতির ব্যাখ্যা কর।
Review the religious policy of
Akbar.



উত্তর

ড: ঈশ্বরী প্রসাদ মন্তব্য করেছেন যে, “হিন্দুস্থানে যে সমস্ত মুসলিম
শাসক রাজদণ্ড পরিচালনা করেন তাদের মধ্যে আকবর ছিলেন ধর্মসহিষ্ণুত নীতির সর্বাপেক্ষা উদার প্রবর্তক। আকবরের এই উদার ধর্মীয়
নীতি গ্রহণের পশ্চাতে তৎকালীন যুগের বংশধারা এবং ব্যক্তিগত প্রতিভা কাজ করেছিলেন। এছাড়া সুলতানী যুগে ভক্তিবাদী সাধকরা বিপ্লবাত্মক উদার চিন্তাধারার মাধ্যমে ভারতীয় সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আঘাত করে, মানুষের মিলনের এক অপূর্ব বাতাবরণ
তৈরী করেছিলেন। এছাড়া ধর্মীয় গোঁড়ামিমুক্ত পরিবারে আকবর জন্মগ্রহণ করেন। সুফী সাধক সেলিম চিশতি এবং খাজা মইনউদ্দিন চিশতি গভীর প্রভাব তাঁর উপর পড়েছিল। আবুল ফজল ও বদায়ুনীর কাছ
থেকে জানা যায় যে আকবর রাজ্যজয়
ও রাজকার্যে ব্যস্ত থাকলেও সত্যকে জানার জন্য তিনি সর্বদা সচেষ্ট থাকতেন। প্রখর বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী আকবর বুদ্ধিবৃত্তির সাহায্যে সত্যানুসন্ধানে ব্রতী হন। হিন্দুপ্রধান ভারতবর্ষে সাম্রাজ্য গঠনের জন্য অবশ্য আকবরের ধর্মসহিষ্ণুতার নীতি গ্রহণ না করে উপায়
ছিল না। কিন্তু এটাই একমাত্র কারণ নয়। ধর্মের প্রকৃত রূপ তিনি জানতে চেয়েছিলেন। তাঁর ধর্মমতের বিরোধী বদায়নী পর্যন্ত একথা স্বীকার করেছেন।
 
আকবরের
জীবনের এই ধর্মনৈতিক বিবর্তনকে
ঐতিহাসিকরা তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। ১৫৬০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে আকবর গোঁড়া মুসলমান হিসাবে ইসলাম ধর্ম মেনে চলতেন। তবে এই সময়ে এমন
কতকগুলি ঘটনা ঘটে যা তার ভবিষ্যৎ
রাজনৈতিক ও ধর্মনৈতিক জীবনের
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিল। ১৫৬২ খ্রীষ্টাব্দে অম্বরের রাজা বিহারীমলের কন্যাকে বিবাহ করেন, ১৫৩৬ খ্রীষ্টাব্দে তীর্থকরা এবং ১৫৬৪ খ্রীষ্টাব্দে ‘জিজিয়া কর’ তুলে দেন। এডওয়ার্ড ও গ্যারেট তাই
আকবরকে “The
tyre of a modern ruler” বলে
অভিহিত করেছেন।
 
১৫৮০
খ্রীঃ থেকে আকবরের ধর্মনৈতিক জীবনের দ্বিতীয় পর্যায়ের শুরু হয়। কারণ এই সময়ে তিনি
মোবারক, আবুল ফজল ও ফৈজীর মতো
উদারনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাবে ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে সরে যান। পার্সিভ্যাল স্পিয়ার মনে করেন আকবরের ধর্মমতের পশ্চাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। হিন্দু ও মুসলমান উভয়
সম্প্রদায়ের লোকেদের আনুগত্য পাওয়ার জন্য তিনি তঁর সমন্বয়বাদী ধর্মমত প্রচার করেন। নিউ কেমব্রিজ হিস্ট্রির লেখক অধ্যাপক জন রিচার্ডসের মতে,
আকবরের এই ধর্মচিন্তার পশ্চাতে
আত্মজিজ্ঞাসা ছাড়াও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা ছিল। তিনি মুসলিম প্রজাদের আস্থা না হারিয়ে হিন্দু
প্রজাদের আস্থা একই সঙ্গে অর্জন করতে চেয়েছিলেন।
 
আকবরের
ধর্মবিশ্বাসের পশ্চাতে প্রকৃত উদ্দেশ্য কি ছিল তা
তা বিতর্কের বিষয়। তবে তার ধর্মনীতি ছিল তাঁর আলোকপ্রাপ্ত মানসিকতার ফল। মধ্যযুগের ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে আকবর সকল সম্প্রদায়কে সমান ধর্মীয় অধিকার দান করেন। ১৫৫৭ খ্রী: সকল ধর্মের সার আহরণের জন্য ফতেপুর সিক্রিতে ইবাদতখানা’ নামে এক উপাসান গৃহ
প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে প্রতি শুক্রবার ধর্মালোচনার জন্য মুসলমান পণ্ডিতদের আগমন ঘটত। কিন্তু মুসিলম পণ্ডিতরা (সুন্নী) তাঁদের মতের কথা সম্রাটকে বোঝান। এর মধ্যে বিখ্যাত
ছিলেন শেখআবদুন নবি, আবুল ফৎ ও নকিব
খান। এদের ধর্মীয় গোঁড়ামির ফলে আকবরের জিজ্ঞাসু মন উপযুক্ত উত্তর
পেতে অসফল হয়। মুসলমান পণ্ডিতদের এই কার্যকলাপে ব্যথিত
আকবর ইবাদতখানা বন্ধ করেন দেন। ইসলাম পণ্ডিতদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে আকবর এই সত্য উপলব্ধি
করেন যে, দ্বন্দ্ব ও বিভিন্নতার অবসান
ঘটিয়ে প্রকৃত সত্যকে জানতে হবে এবং বিভিন্ন ধর্মের মত- পার্থক্য দূর করে একটা ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আকবরের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার সঙ্গে ধর্মনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতে গ্রহণ করা। এই সময়ে আকবরের
ধর্মনৈতিক জীবনের বির্তন অত্যন্ত জটিল। কারণ তিনি একদিকে উলেমাদের ক্ষমতা যেমন খর্ব করতে উদ্যত হন অন্যদিকে তেমনি
ঠিক সেই মুহূর্তে জিজিয়া কর পুনঃপ্রবর্তন করেন।
 
আরও পড়ুন 

১৫৭৯
খ্রীঃ আকবর মহজরনামা নামে একটি ঘোষণাপত্র জারি করেন। সভাকবি ফৈজী এই খুৎবা বা
ঘোষণাপত্র রচনা করেন। এতে বলা হয় যে ইসলাম ধর্মমতের
ব্যাখ্যা সম্পর্কে কোন বিরোধ দেখা দিলে সম্রাট নিজে প্রধান হিসাবে তার ব্যাখ্যা দেবেন। অধ্যাপক রিচার্ডসনের মতে, তাঁর চাপে পড়ে আবদুন নবি, কাজী জালালউদ্দিন প্রমুখ মহারনামায় স্বাক্ষর করেন। স্মিথ আকবরের এই নীতির তীব্র
সমালোচনা করে বলেছেন যে, ধর্মীয়তত্ত্বের ব্যাখ্যার চূড়ান্ত ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে সম্রাট একাধারে পোপ ও সিজারের ভূমিকা
নেন। ডঃ মুজিবের মতে
যেহেতু আকবর ধর্মতত্ত্ব সুপণ্ডিত ছিলেন না সেহেতু এই
অধিকার নিজের হাতে নিয়ে তিনি ভুল করেছিলেন। আর. পি. ত্রিপাঠি মনে করেন ভারতে শিয়া-সুন্নীদের ধর্মীয় মতবিরোধ, কাশ্মীর ও আহম্মদনগরের সাম্প্রদায়িক
হানাহানির মুসলিম-অমুসলিম গোড়া লোকেদের মধ্যে বিবাদের সমস্যাক আকবর অস্বীকার করেতে পারেননি। তাছাড়া ইরানের শাহ নিজেকে বিশ্বের শিষ্য সম্প্রদায়ের নেতা এবং তুর্কী সুলতান নিজেকে সুন্নী সম্প্রদায়ের নেতা বলে দাবী করতেন। ভারতবর্ষ সম্পর্কে উক্ত রাষ্ট্র দুটির কি ধারণা তা
জানার জন্য আকবর মহজরনামা জারি করেন।
 
আকবর
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই ‘খুতবা’ ও ‘মহজরনামা’ ঘোষণা
করেন। ঐক্যবদ্ধ ভারতের স্বপ্ন বাস্তবে রূপায়ণের জন্য তিনি এই ঘোষণা করেছিলেন।
ডঃ রায়চৌধুরী বলেছেন ‘মহজরনামা’ প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক দলিল। বর্তমানে আলিগড় ঐতিহাসিকদের মধ্যে খ্যাতনামা গবেষক ইকতিদার আলাম খান মন্তব্য করেন যে, আকবরের ধর্মনীতির পশ্চাতে কোন উদারনৈতিক বা বৌদ্ধিক প্রভাব
ছিল না। তিনি যা করেছেন রাষ্ট্রনৈতিক
প্রয়োজনে করেছেন। রাজকার্যে ভারসাম্য আনার জন্য তিনি রাজপুতানের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। ১৫৬২ খ্রীঃ তীর্থকর এবং জিজিয়া কর বন্ধের নির্দেশ
দেন। ১৫৮০-৮২ খ্রী: আকবর
সূর্য ও অগ্নি উপাসনা
শুরু করেন এবং ১৫৮২ খ্রীঃ আকবর দীন-ই-ইলাহী নামে
এক একেশ্বরবাদী ধর্মমতের প্রবর্তন করেন। দীন-ই-ইলাহীর কোন
লিখিত ধর্মগ্রন্থ ছিল না। ফলে এই ধর্মে আকবর
প্রকৃত কি বলেছিলেন তার
পক্ষপাতহীন বিবরণ পাওয়া যায় না। আবুল ফজল, বাদাওনীর রচনা থেকে জানা যায় যে, যারা এই ধর্মমত গ্রহণ
করতেন তাঁদের সম্রাটের কাছ থেকে দীক্ষা নিতে হত। সকলেই এই ধর্ম গ্রহণ
করতে পারতেন না। ধর্মগ্রহণকারীদের চার প্রকার আনুগত্যের কথা সম্রাটের কাছে স্বীকার করতে হত। দীন-ই-ইলাহি গ্রহণকারী
ব্যক্তিরা জীবন, সম্মান ও ধর্মবিসর্জন দিতে
এবং আকবরের ছবি তার পাগড়ির মধ্যে রাখতে হত। এই ধর্মগ্রহণকারী ব্যক্তিরা
নিরামিষ খেতেন, ভিক্ষাদান করতেন এবং জন্মদিনে খাওয়াতেন। তাঁরা অহিংসা, জুয়া খেলা, মদ্যপান, বাল্যবিবাহ প্রভৃতি করতেন না। আকবর এই ধর্মগ্রহণের জন্য
কাউকে জোর করতেন না। এই ধর্মমতের পক্ষে
কোনরকম প্রচারকার্য চালাননি।
 
স্মিথ
ও জেসুইট লেখকদের মতে, ইবাদতখানা স্থাপনের পরই আকবর ইসলাম ধর্মের প্রতি বিশ্বাস হারান এবং দীন-ই-ইলাহি ঘোষণার
পর ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেন। এই মত অনেকেই
স্বীকার করেন না। তাদের মধ্যে আকবর ছিলেন সংস্কারবাদী ও যুক্তিবাদী মুসলমান।
তিনি রাজনৈতিক কারণে ধর্ম প্রচার করেন। সুতরাং সেখানে তাঁর ইসলাম ধর্ম ত্যাগের কথা উঠতেই পারে না। কারণ আকবর যা করেন তা ছিল পুরো
 রাজনৈতিক
কাজ মাত্র।

।। আগ্রহী লেখকদের আহ্বান।।

আপনাদের মূল্যবান লেখা পাঠিয়ে দিন আমাদের। যেকোনোও সময়, যেকোনও দিন। আমরা প্রকাশ করবো।

বিষয়:-
বিজ্ঞানের আবিষ্কার,চলচ্চিত্র, খেলাধুলা, সভা-সমিতি, মনীষীদের জীবন, ধর্মান্ধতা, সামাজিক সংকট, কুসংস্কার বিরোধী, পলিটিক্যাল স্ক্যাম, পলিটিক্যাল ইস্যু, পলিটিক্যাল টেরোরিজম, সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এমন যেকোন বিষয়েই লেখা পাঠানো যাবে।

নির্দিষ্ট কোন শব্দ সীমা নেই।
WhatsApp করে লেখা পাঠান:- 8116447650

…. প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন আমাদের WhatsApp নম্বরে

বাবরের শেষ ইচ্ছা

 

বাবর হুমায়ূনকে যে-গোপন শেষ-নির্দেশ দিয়ে যান, সেটির ইংরাজী বয়ান ডঃ রাজেন্দ্রপ্রসাদের ‘ইন্ডিয়া ডিভাইডেড’ পুস্তকে সংযোজিত হয়েছে। নিখিল ভারত শিয়া সম্মেলন এ বয়ানটি প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, তুর্কি ভাষায় লিখিত মূল দলিলটি ইন্দোর ষ্টেট লাইব্রেরীতে রয়েছে।

 

রবীন্দ্রনাথ উল্লেখ করেছেন, গুরু নানকের সঙ্গে বাবরের দেখা হয়েছিল এবং বাবর তাঁকে প্রচুর উপঢৌকন দিতে চেয়েছিলেন। নানক সে-সব প্রত্যাখান করে বলেছিলেন, পুরস্কার তিনি ঈশ্বরের কাছেই গ্রহণ করেন। বাবরের ‘শেষ ইচ্ছা’-তে আমরা একজন ধর্ম-নিরপেক্ষ এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রশাসককে দেখতে পাই। আকবর ধর্ম-নিরপেক্ষতার ধারাকে ধর্ম সমন্বয়ের দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ সম্রাট আকবরকে অশোকের সঙ্গে তুলনা করে বলেছিলেন, “বৌদ্ধযুগে অশোকের মত মোগল সম্রাট আকবরও কেবল রাষ্ট্র সাম্রাজ্য নয়, একটি ধর্মসাম্রাজ্যের কথা চিন্তা করিয়াছিলেন। এই জন্যই সে সময়ে পরে পরে কত হিন্দু ও মুসলমান ধর্মের অন্তরতম মিলনক্ষেত্রে এক মহেশ্বরের পুজা বহন করিয়াছিলেন। এবং এমনি করিয়াই বাহিরের সংসারের দিকে যেখানে অনৈক্য ছিল, অন্তরাত্মার দিকে পরম সত্যের আলোকে সেখানে অধিষ্ঠান আবিষ্কৃত হইয়াছিল।” (১৯১৮। স্বাধিকার প্রমত্ত। কালান্তর। ১৩।২৬৫)।

 

রবীন্দ্রনাথ ঐ প্রবন্ধে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত এর ধারাবাহিকতার কথা আলোচনা করেছেন। নিম্নে বাবরের ‘শেষ ইচ্ছা’ দলিলটির বাংলা ভাষা দেওয়া হল ।

 

জহরুদ্দিন মোহাম্মদ বাদশাহ গাজী (বাবর) কর্তৃক মুহাম্মদ নাসিরুদ্দিন হুমায়নকে প্রদত্ত গোপন শেষ নির্দেশ

 

“হে আমার পুত্র, ভারত রাজ্য নানা রকম ধর্মের আবাস। ভগবানকে অনেক ধন্যবাদ, তিনি তার সার্বভৌমত্ব তোমার উপর অর্পণ করেছেন। তোমার উপর এ-দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে যে, তোমার মানসপট থেকে সর্বপ্রকার ধর্মীয় কুসংস্কার মুছে ফেলবে, প্রত্যেক ধর্মের বিধান অনুযায়ী ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। বিশেষ ভাবে গোহত্যা পরিহার করবে, তা না হলে ভারতের জনগনের হৃদয় তুমি জয় করতে পারবে না, এদেশের প্রজাদের রাজানুগত্যে বাঁধা যাবে না।”

 

 

Leave a Comment