[PDF] পলাশি থেকে পার্টিশন: আধুনিক ভারতের ইতিহাস by Shekhar Bandyopadhyay
পলাশী থেকে পার্টিশন pdf
পলাশী থেকে পার্টিশন ও তারপর pdf
Palashi Theke Partition Bengali PDF
palashi theke partition o tarpor pdf download
[PDF] Plassey to Partition by Sekhar Bandyopadhyay –
Plassey to Partition by Sekhar Bandyopadhyay PDF
Plassey to Partition | পলাশী থেকে পার্টিশন -:ভূমিকা:-
ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতের ইতিহাস আটটি অধ্যায়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে এই গ্রন্থে। এখানে আলোচনার মূল উপপাদ্য বিষয় অবশ্য ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র অথবা “ভারত যারা শাসন করত” তারা নয়। আমাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে ভারতের জনগণ, শাসকশ্রেণীর সম্বন্ধে তাদের ধারণা, তাদের সংস্কৃতিক সংকট, সামাজিক পরিবর্তন, বিদ্রোহ, আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধান এবং সর্বোপরি ঔপনিবেশিক শাসনের সূত্র ধরে আসা আধুনিকতার সঙ্গে তাদের বোঝাপড়ার ইতিহাস। এই গ্রন্থে যা বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে, তা হল পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদের প্রবল উপস্থিতির মধ্যে ভারতীয় জাতির অভ্যুত্থানের এবং তার অন্তবর্তী সংঘর্ষ ও সংকটের বর্ণময় ইতিহাস।
সাম্প্রতিক কালে আধুনিক ভারতের ইতিহাসের ওপর অনেক মূল্যবান গবেষণা হয়েছে। এই সব স্বল্প পরিসরের গভীর গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্যগুলিকে সাজিয়ে এবার বড় ছবিটি তৈরি করার সময় এসেছে। ঐতিহাসিক গবেষণার প্রাথমিক উপাদানগুলির থেকে বহু হাজার মাইল দূরে দক্ষিণ গোলার্ধের দ্বীপবাসী জীবনে আমার পক্ষে এই কাজটি করা সম্ভব বলে মনে হয়েছিল। এই গ্রন্থে একদিকে যেমন ছাত্র এবং সাধারণ পাঠকদের প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে, তেমনি অন্যদিকে স্বীকার করা হয়েছে যে একই ঘটনার নানা ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা থাকা সম্ভব। তাই সচেতনভাবেই এখানে আলোচনাকে ইতিহাসচর্চার ও বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। অর্থাৎ গত দুই দশকে ঔপনিবেশিক ভারতের ইতিহাস সম্বন্ধে যা কিছু নতুন গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে সেগুলির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি এখানে সংযোজিত হয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে সমস্ত রকম ব্যাখ্যা এবং বিতর্কগুলিকে শুধুমাত্র বর্ণনা করা হয়েছে এই গ্রন্থে। এইসব বিতর্কগুলিকে নতুনভাবে পরীক্ষা করে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রকৃতি এবং বহুত্ববাদী ও বহুস্বরবিশিষ্ট ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উত্থান সম্বন্ধে কিছু স্বকীয় সিদ্ধান্তে আসার প্রয়াস রয়েছে এই গ্রন্থে।
অষ্টাদশ শতকের ভারতে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন দিয়ে আমাদের আখ্যানের শুরু, যার একদিকে রয়েছে মুঘল সাম্রাজ্যের পতন এবং অন্যদিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উত্থান; আর এই দুইয়ের মধ্য পর্যায়ে ছিল কিছু শক্তিশালী উত্তরাধিকারী আঞ্চলিক রাষ্ট্র, মুঘল শক্তির বিকেন্দ্রীকরণের ফলে সেগুলির সৃষ্টি। তারপর বর্ণনা করা হয়েছে। সাম্রাজ্য গঠনের ভাবাদর্শ, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের চরিত্র সম্বন্ধে ঐতিহাসিক বিতর্কগুলি ঔপনিবেশিক অর্থনীতির বিবর্তন ও ভারতীয় সমাজের ওপর তার ফলাফল। তারপর আছে ভারতীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া, তাদের সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া, সমাজ সংস্কার ও সর্বোপরি তাদের বিদ্রোহ, যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহ। এরপরের অধ্যায়গুলিতে আলোচনা করা হয়েছে ভারতে আধুনিক জাতীয়তাবাদের উত্থান, তার চরিত্র নিয়ে বিতর্ক, গান্ধীর নেতৃত্বে তার রূপান্তর এবং ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে গণআন্দোলন সংগঠিত হওয়ার কাহিনী। এখানে জাতীয়তাবাদের আলোচনাকে সেই সংকীর্ণ আলোচনার ক্ষেত্রের বাইরে নিয়ে যাবার চেষ্টা করা হয়েছে, যেখানে জাতীয় রাষ্ট্র থাকে কেন্দ্রবিন্দুতে, আর একটি সমধর্মী জাতির অস্তিত্বকে মেনে নেওয়া হয় বিনা প্রশ্নে। এই গ্রন্থে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের গুরুত্বকে অবশ্যই স্বীকার করা হয়েছে—কারণ শুধুমাত্র সংখ্যার দিক থেকে দেখলেও এই আন্দোলন ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক আন্দোলন। কিন্তু সেই সঙ্গে এ কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে জনগণ প্রায়শই এক স্বরে কথা বলেনি। যদি কংগ্রেস ভারতে জাতীয়তাবাদের মূল ধারার প্রতিনিধিত্ব করে থাকে, তবে সেখানে আরও অনেকগুলি শক্তিশালী সংখ্যালঘু কণ্ঠস্বরের অস্তিত্বও অস্বীকার করার উপায় নেই, যার মধ্যে ছিল মুসলিম সম্প্রদায়, অব্রাহ্মণ এবং দলিত জাতিগুলি, মহিলারা, কৃষক এবং শ্রমিক শ্রেণী, স্বাধীনতা সম্বন্ধে যাদের ভিন্ন ধারণা ছিল, সেগুলিকে মূলস্রোতের জাতীয়তাবাদ আত্মস্থ করতে পারেনি। তাই এই জাতীয় আন্দোলনে কংগ্রেসের দৃষ্টি যখন শুধুমাত্র রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের প্রশ্নেই আবদ্ধ থেকেছে তখন অন্যদিকে আমরা দেখি নাগরিকত্বের অধিকার নিয়ে দলিতদের উদ্বেগ, স্বাধীনতার জন্য নারীদের প্রত্যাশা, এবং সুবিচারের জন্য কৃষক ও শ্রমিকদের দাবি। ১৯৪৭-এর আগস্ট মাসে স্বাধীনতা নিয়ে আনন্দ উৎসব দুঃখজনক পার্টিশানের হিংসাত্মক ঘটনাবলীর আঘাতে চাপা পড়ে যায়। এবং এর ফলে একটি তথ্যই উদ্ঘাটিত হয়। তা হল মুসলিম সম্প্রদায় জাতীয়তাবাদের এই মূলস্রোত থেকে দূরে সরে গিয়েছিল। অন্যভাবে বলতে গেলে, এই গ্রন্থে ঐক্যের মধ্যে বিভিন্নতাকে উপেক্ষা করা হয়নি। এখানে এক বহুধ্বনিবিশিষ্ট জাতীয়তাবাদের কথা বলা হয়েছে, সেখানে বিভিন্ন স্বরধ্বনিগুলি স্বৈরতন্ত্রী ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে এক সাধারণ আন্দোলনের মধ্যে মিলেমিশে গিয়েছিল, যদিও সেই শাসনের অবসানে ভবিষ্যতের চেহারাটা কেমন হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন ধারণার অস্তিত্ব ছিল। ভারতে এই বহুত্ববাদী জাতি গঠনের চলমান প্রক্রিয়া ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানেই সমাপ্ত হয় নি, যদিও সেখানেই এই গ্রন্থের শেষ। ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানে একটি পর্বের সমাপ্তি ঘটে মাত্র, কারণ এর পরবর্তী পর্যায়ে ‘জাতি-ক্ষেত্রের’ মধ্যে অবস্থানের জন্য প্রতিযোগিতা নতুন অর্থ ও মাত্রা পরিগ্রহ করে, তবে আমাদের বর্তমান প্রয়াস ঔপনিবেশিক যুগেই সীমিত থাকবে, সমঝোতা ও সংঘর্ষে ভরা জাতি গঠনের দীর্ঘ ইতিহাসের মধ্যে ঢুকবে না।
এই ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে যদি কোন বইয়ের বিশেষ প্রভাব পড়ে থাকে তবে তা হল সুমিত সরকারের Modern India 1885-1947 যে বইটি আমি অবাধে ব্যবহার করেছি তথ্য ও নানা ধারণার আকর হিসেবে, যদিও এর সব বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত হতে পারিনি। যতদূর সম্ভব পাদটীকায় এর সূত্র নির্দেশ করা হয়েছে, তবে এই ফল এত গভীর এবং ব্যাপক যে ঠিক আনুষ্ঠানিকভাবে হয়তো সব সময় তা স্বীকার করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও আরও কতকগুলি বিশেষ বই মূলত তথ্যের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখ করা যেতে পারে এস. আর. মেহেরোত্রা (১৯৭১), ফিলিপ লসন (১৯৯৩), ডেভিড হার্ডিম্যান (১৯৯৩), জেরাল্ডিন ফোর্বস (১৯৯৮) এবং ইয়ান কোপল্যান্ড (১৯৯১)-এর বইগুলি। তবে এই গ্রন্থে যা পাওয়া যাবে তা হল ভারতীয় ইতিহাস সম্বন্ধে আমার নিজস্ব ধারণা। অর্থাৎ অন্যভাবে বলা চলে, যেহেতু নিরপেক্ষ ইতিহাস বলে কিছু নেই, এই ইতিহাসের ব্যাখ্যা আমার মতাদর্শ এবং ধ্যান-ধারণার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। আমি তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী নই। তবে এখন আমরা সবাই স্বীকার করি যে ইতিহাসের কোন ব্যাখ্যাই শেষ কথা নয়। আধুনিক ভারতের ইতিহাসের অন্যান্য ব্যাখ্যায় যারা আগ্রহী, তারা এই বইয়ের শেষে সংকলিত গ্রন্থপঞ্জীটি দেখতে পারেন।
মূল ইংরেজি গ্রন্থ From Plassey to Partition প্রকাশিত হবার পর যে অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি তাতে মনে হয় এই বাংলা সংস্করণ বাংলা ভাষা-ভাষী ছাত্র- ছাত্রী ও সাধারণ পাঠকদের কাজে লাগবে। তবে একটি কথা এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে বইটি বাংলায় অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত ইংরেজি বইটি প্রকাশ হবার অনেক আগেই নেওয়া হয়েছিল এবং সেই সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগের জন্য আমি ওরিয়েন্ট লংম্যানের কাছে কৃতজ্ঞ। মূল ইংরেজি পাণ্ডুলিপি থেকে প্রাথমিক বাংলা অনুবাদের কাজটি সেরে দিয়ে কৃষ্ণেন্দু রায় আমার ধন্যবাদার্হ হয়েছেন। বাংলা সংস্করণের প্রস্তুতির কাজে নানাভাবে সাহায্য পেয়েছি আমার স্ত্রী শ্রীলেখার কাছ থেকে, তবে তাকে আর আলাদা করে ধন্যবাদ জানাবার প্রয়োজন বোধ করছি না। যে কথাটি বলে শেষ করব তা হল বাংলা বইয়ের নামকরণে ‘পার্টিশান’ শব্দটি রাখা হয়েছে, কারণ ঐতিহাসিক জ্ঞান পাণ্ডের মতন আমি মনে করি যে এই ইংরেজি শব্দটির সঠিক বাংলা অনুবাদ করা সম্ভব নয়। আর এই বিজাতীয় ধারণাটির মতন এই শব্দটিও আজ ব্যবহারিক বাংলা ভাষার ও জনজীবনের অন্তর্গত হয়ে গেছে।
একথা বলাই বাহুল্য যে সমস্ত ভ্রান্তি ও ত্রুটির জন্য আমি একাই দায়ভাগী রইলাম।
শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় [ওয়েলিংটন, ২২শে অক্টোবর 2008]
[PDF] Palashi Theke Partition O Tarpor: Adhunik Bharater Itihash – Sekhar Bandyopadhyay
Book & Author Name: | পলাশি থেকে পার্টিশন by শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় |
Language | Bengali |
Pages | Up-date Soon….! |
e-Book | |
File Size: | Up-date Soon….! |