ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আজাদ হিন্দ ফৌজের ভূমিকা pdf | History Note
আজাদ হিন্দ ফৌজ pdf | PDF Drive
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজ pdf | NDL
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজের অবদান | আধুনিক ভারতের ইতিহাস
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজের ভূমিকা | History Honours Note
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি আজাদ হিন্দ ফৌজের ভূমিকা | UG History Note
ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আজাদ হিন্দ ফৌজ এবং নেতাজি কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আজাদ হিন্দ ফৌজের ভূমিকা pdf
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজ pdf
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজী ও আজাধীন ফৌজ এর অবদান আলোচনা করো
আজাদ হিন্দ বাহিনীর প্রেক্ষিতে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষচন্দ্র বসুর ভূমিকা মূল্যায়ন কর।
Assess the Contribution of Subhash Chandra Bose and I.N.A. towards the achievements of India’s independence. | Modern Indian History
চলো দিল্লি পুকারকেকৌমী নিশান সাম্হালকে লাল কিল্পে গাঢ় কেলঢ়ায়ায়ে যা লঢ়ায়ায়ে যা।কদম কদম বাড়ায়ে যা।।–আজাদী সেনা
কদম কদম বাড়িয়েও আজাদি সেনারা দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছোতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে আজাদ হিন্দ বাহিনীর অবদান ভারতের ইতিহাসের পাতায় চিরকাল সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে। আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর শেষ নির্দেশনামায় ঘোষণা করেছিলেন—পৃথিবীতে এমন কোনো শক্তি নেই, যা ভারতকে পদানত করে রাখতে পারে। ভারত স্বাধীন হবে এবং তা হবে অনতিকালের মধ্যেই।
সুভাষচন্দ্রের দেশত্যাগ:
ভারত রক্ষা আইনে গ্রেফতার করে (১৯৪০ খ্রি. ২ জুলাই) পরে সুভাষচন্দ্রকে তাঁর কলকাতার এলগিন রোডে নিজের ঘরে অন্তরিন রাখা হয় (১৯৪০ খ্রি. ৫ ডিসেম্বর)। ব্রিটিশের কড়া প্রহরা এড়িয়ে ভাইপো শিশির বসুর সাহায্যে মহম্মদ জিয়াউদ্দিনের ছদ্মবেশে সুভাষচন্দ্র দেশত্যাগের জন্য বেরিয়ে পড়েন। তিনি উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে কাবুলের পথ ধরে পেশোয়ারে যাওয়ার লক্ষ্য স্থির করেন। মাঝরাতে গোমো স্টেশনে এসে দিল্লিগামী কালকা মেলে তুলে দিয়ে কাকাকে বীরবিদায় জানান ভাইপো শিশির বসু। দিল্লি পৌঁছে গাড়ি পালটে সুভাষ বসু উঠে বসেন ফ্রন্টিয়ার মেলে। বহু কষ্ট সহ্য করে দুর্গম পথ অতিক্রম করে তিনি পৌঁছোন আফগানিস্তানের কাবুলে। ড. অমলেশ ত্রিপাঠী লিখেছেন, “রবীন্দ্রনাথ যাকে ‘দেশনায়ক’ বলে বরণ করেছিলেন, ভাগ্যের পরিহাসে তাকে দেশত্যাগ করতে হল।”
জার্মানিতে স্বাধীনতার প্রচেষ্টা:
সুভাষচন্দ্র “সিনর অরল্যান্ডো ম্যাসোটা” ছদ্মনাম নিয়ে কাবুল থেকে বার্লিন যাওয়ার পথে মস্কোতে কিছুদিন অবস্থান করেন। কিন্তু স্ট্যালিনের কাছ থেকে কোনোরকম সহযোগিতার আশ্বাস পাননি। I.N.A. (Indian National Army)-র প্রকাশনা ও প্রচার সচিব এস. এ. আয়ার বলেছেন – কাবুল থেকে বার্লিনের পথে মস্কোয় অবস্থানকালে যদি রাশিয়া তাঁকে কিছুটা আশ্বাস দিত, তবে তিনি কর্মক্ষেত্র হিসেবে মস্কোকেই বেছে নিতেন। যাই হোক সুভাষচন্দ্র জার্মানির বার্লিনে এসে পৌঁছোন (১৯৪১ খ্রি. ২৮ মার্চ)। বার্লিনে এসে তিনি হিটলারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিবেনট্রপ-এর সঙ্গে দেখা করেন ও ভারতীয় মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে এক পরিকল্পনা পেশ করেন। স্থির হয়-
- বার্লিন থেকে তিনি ব্রিটিশবিরোধী প্রচার চালাবেন।
- জার্মানিতে বন্দি ভারতীয় সেনাদের নিয়ে স্বাধীন ভারতীয় সংঘ গড়ে তুলবেন।
- জার্মানি ভারতের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি জানাবে।
- আফগানিস্তানকে ভারত ও ইউরোপের মধ্যেকার যোগসূত্রের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
এ ব্যাপারে তিনি মুসোলিনির সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। কিন্তু হিটলার বা মুসোলিনি কেউই সুভাষচন্দ্রের প্রস্তাবে সাড়া দেননি। তবু জার্মানিতে থাকাকালীন তিনি জার্মানির হাতে যুদ্ধবন্দি ভারতীয় সেনাদের নিয়ে ইন্ডিয়ান লিজিয়ান নামক একটি দল গঠন করেন।
জাপানে স্বাধীনতার প্রচেষ্টা:
জার্মানিতে কোনোরকম সাহায্য না পেয়ে সুভাষচন্দ্র জাপানের প্রধানমন্ত্রী মার্শাল তোজোর আমন্ত্রণে জাপান যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জার্মানি থেকে সমুদ্রপথে সাবমেরিনে করে জাপান আসা ছিল অত্যন্ত বিপদসংকুল। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিয়েল বন্দর থেকে আটলান্টিক মহাসাগর দিয়ে আফ্রিকার দক্ষিণে মাদাগাসকার থেকে ৪০০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে আসেন সুভাষ। সেখানে ১৯৪৩ খ্রি.. ৯ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে সুভাষচন্দ্র ও তাঁর সঙ্গী আবিদ হাসানকে জার্মান সাবমেরিন থেকে জাপানি সাবমেরিনে তুলে দেওয়া হয়। এরপর সুভাষ ৯৭ দিন ধরে দুঃসাহসিক সাবমেরিন অভিযান চালিয়ে প্রায় কয়েক হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে জাপানের টোকিও-তে এসে পৌঁছোন (১৯৪৩ খ্রি. ১৩ মে)। সেখানে সুভাষচন্দ্র প্রধানমন্ত্রী তোজোর সঙ্গে দেখা করলে সব সাহায্যের আশ্বাস পান। শুরু হয় সুভাষের স্বপ্নের অভিযান।
আই. এন. এ. গঠন:
ভারতের বিপ্লববাদের জনক রাসবিহারী বসু লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে সুভাষের অনেক আগেই জাপানে চলে এসেছিলেন। এখানে তিনি এক মুক্তি বাহিনী গঠনের উদ্যোগ নেন। ব্যাংকক শহরে এক সম্মেলনে (১৯৪২ খ্রি. ১৫ জুন) রাসবিহারীর সভাপতিত্বে গড়ে ওঠে ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘ বা ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লিগ। এর পরে ক্যাপটেন মোহন সিংয়ের সক্রিয় সহযোগিতায় ২৫ হাজার ভারতীয় সেনা (পরে বেড়ে হয় ৪০ হাজার) নিয়ে ভারতীয় জাতীয় বাহিনী (Indian National Army) বা আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠিত হয়।
আই. এন. এ.-র নেতৃত্ব গ্রহণ:
সুভাষচন্দ্র জাপানে এলে রাসবিহারী বসু সুভাষকে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লিগের দায়িত্বগ্রহণের আহ্বান জানান। সুভাষচন্দ্র সেই ডাকে সাড়া দিয়ে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় রাসবিহারী বসুর হাত থেকে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন (১৯৪৩ খ্রি., ২৫ আগস্ট)।
আই. এন. এ.-এর পুনর্গঠন:
আজাদ হিন্দ বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করার পর সুভাষচন্দ্র একে নতুন করে সাজিয়ে তোলেন। আজাদ হিন্দ বাহিনীকে তিনি বিভিন্ন ব্রিগেডে ভাগ করেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা দাড়ায় ৫০ হাজারে। এখানে জাতি-ধর্ম-প্রাদেশিকতার মতো সংকীর্ণতার স্থান ছিল না। গান্ধি ব্রিগেড, আজাদ ব্রিগেড, নেহরু ব্রিগেড, সুভাষ ব্রিগেড (সুভাষের অনিচ্ছা সত্ত্বেও) এবং নারীদের নিয়ে ক্যাপটেন লক্ষ্মী স্বামীনাথন-এর নেতৃত্বে ঝাঁসির রানি বাহিনী নামে আজাদি ফৌজকে পাঁচটি ব্রিগেডে ভাগ করা হয়।
আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা:
১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২১শে অক্টোবর নেতাজি আজাদ হিন্দ সরকার গঠন করার কথা ঘোষণা করেন। এই সরকারের বিভিন্ন পদগুলিতে ছিলেন —
- আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক, সমর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী—সুভাষচন্দ্র বসু।
- মহিলা সংঘ – ক্যাপটেন শ্রীমতী লক্ষ্মী স্বামীনাথন।
- প্রকাশনা ও প্রচার—এস এ আয়ার।
- অর্থ—লে. কর্নেল এ. সি. চ্যাটার্জি।
- সচিব- এ. এস. সহায়।
- সর্বোচ্চ উপদেষ্টা—রাসবিহারী বসু।
- আইন উপদেষ্টা– এ. এন. সরকার।
সরকারের লক্ষ্য:
নেতাজি ঘোষণা করেন আজাদ হিন্দ সরকারের প্রধান লক্ষ্য হল ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসনের উৎখাত করা। এই সরকারের রাষ্ট্রভাষা ছিল হিন্দুস্থানি (হিন্দি ও উর্দুর মিশ্রণ)। জাতীয় পতাকা ছিল কংগ্রেসের তেরঙা পতাকার মাঝে লাফানো বাঘের ছবি। জাতীয় সংগীত ছিল রবীন্দ্রনাথের ‘জনগণমন’ এবং ‘জয়হিন্দ‘ হল পরস্পরের প্রতি সম্ভাষণ থাকা। স্বাধীন আজাদ হিন্দ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল থাইল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, জাপান- সহ বিশ্বের ৯টি দেশ। আজাদ হিন্দ বাহিনী তাদের সংগ্রামের কথা প্রকাশ করবার জন্য সিঙ্গাপুর, রেঙ্গুন, ব্যাংকক থেকে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় বেতার প্রচার শুরু করে এবং বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় কয়েকটি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী তোজো আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ দুটি আজান হিল সরকারের হাতে তুলে দেন।
ভারত অভিযান:
২৩ অক্টোবর ১৯৪৩ খ্রি. আজাদ হিন্দ সরকার ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। নেতাজি রেঙ্গুনে তাঁর প্রধান সামরিক বস্তুর গড়ে তোলেন ও শুরু করেন তাঁর বহু কাঙ্ক্ষিত ভারত অভিযান। বীর আজানি সেনারা তাইপোং থেকে যাত্রা শুরু করে পাহাড়, পর্বত, নদী টপকে প্রায় ৪০০ মাইল পথ পায়ে হেঁটে ভারত সীমান্তের দিকে পাড়ি দেন। কক্সবাজার থেকে ৫০ মাইল দূরে মৌডক নামক স্থানে ব্রিটিশ ঘাটি লক্ষ করে আক্রমণ চালায় আজাদি সেনারা। ক্যাপটেন সুরজমলের নেতৃত্বে আজাদি সেনারা মৌড়ক জয় করে। অবশেষে কোহিমা পর্যন্ত এসে ভারতের মাটিতে তেরঙা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে (১৯৪৫ খ্রি.. ১৯ মার্চ)।
আত্মসমর্পণ:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রণাঙ্গনে মিত্রশক্তির কাছে অক্ষশক্তির পরাজয় ঘটতে থাকলে জাপান, সাহায্যের হাত গুটিয়ে নেয়। খাদ্য ও অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভারতীয় বাহিনীকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোহিমা ছেড়ে প্রবল বর্ষণ ও এক হাঁটু কাদার মধ্য দিয়ে কয়েকশত মাইল পিছিয়ে যেতে হয়। অবশেষে জাপান মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করলে (১৯৪৫ খ্রি.. আগস্ট) আজাদি সেনারা অস্ত্র ত্যাগ করতে বাধ্য হন। নেতাজি দু চোখে নতুন স্বপ্ন নিয়ে বার্মা (বর্তমান মায়ানমার) থেকে সায়গন-এ পৌঁছেন। বলা হয় যে, এরপর ফরমোজার কাছে তাইহোকুতে এক বিমান দুর্ঘটনায় (১৯৪৫ খ্রি. ১৮ আগস্ট) তাঁর মৃত্যু হয় যদিও এই ঘটনার সত্যতা আজও সংশয়াতীত নয়।
মূল্যায়ন:
নেতাজি চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ভারতবাসীর স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন। তাই গান্ধিজি আজাদ হিন্দ বাহিনীর মূল্যায়নে বলেছিলেন—যদিও আজাদ হিন্দ ফৌজ তাদের আশু লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারেনি, তথাপি তারা এমন অনেক কিছু করেছে, যেজন্য তারা গর্ববোধ করতে পারে।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজ pdf
তথ্যসুত্রঃ-
১) আধুনিক ভারতের ইতিহাস – বিপান চন্দ্র
২) পলাশী থেকে পার্টিশন – শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়
৩) স্বদেশ সভ্যতা ও বিশ্ব – জীবন মুখোপাধ্যায়
৪) স্বদেশ পরিচয় – জীবন মুখোপাধ্যায়
৫) ইতিহাস শিক্ষক – হাজরা ও দত্ত
৬) স্বদেশ ও বিশ্ব – শান্তনু মিস্ত্রী