বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন কীভাবে বাংলায় স্বদেশী আন্দোলনের দিকে পরিচালিত করেছিল তা ব্যাখ্যা কর? | Modern Indian History
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন বলতে কী বোঝো? | GKToday
বঙ্গভঙ্গ pdf | PDF Drive
বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশী আন্দোলন pdf | Nana Ronger itihas
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে | History Notes
Explain how did anti-partition movement led to the Swadeshi Movement in Bengal?
Ans.
পরিস্থিতি:
লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বাংলা জুড়ে তীব্র প্রতিবাদ, বিক্ষোভ শুরু হয়। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তথাকথিত বাংলার অভিজাত সম্প্রদায়। উনিশ শতকের নবজাগরণে দীক্ষিত বাঙালির স্বাধীনতাকামী মনোভাব ও সাংস্কৃতিক চেতনায় এই সিদ্ধান্ত তিব্র আঘাত করে। শিক্ষিত, রাজনীতি-সচেতন মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজের কাছে বঙ্গ-ব্যবচ্ছেদের সিদ্ধান্ত ছিল জাতীয় অপমানের সমান। তার ওপর ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকটে জেরবার বাঙালির কাছে আন্দোলন ছাড়া দ্বিতীয় কোনো রাস্তা ছিল না।
ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালি ভদ্রলোক গোষ্ঠী নিজের সাহিত্য-সংস্কৃতির জন্য গর্বিত ছিল। বঙ্কিমচন্দ্রের “আনন্দমঠ” উপন্যাস পাঠ করে এবং বিবেকানদের উদাত্ত আহ্বানে বাঙালির মনে এক গভীর আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধ জেগে ওঠে। ঠিক এই সময়ে কার্জনের বঙ্গ-ব্যবচ্ছেদের সিদ্ধান্ত বাঙালি হৃদয়ে আঘাত হানে। ফলে বাঙালি স্বাদেশিকতাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে। বাংলায় সূচনা ঘটে স্বদেশি আন্দোলনের।
স্বদেশি আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব:-
ভারতের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশি আন্দোলন এক স্মরণীয় অধ্যায়। সরকারি দমননীতি, সাম্প্রদায়িক বিভেদ ও অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার জন্য এই আন্দোলন পরিপূর্ণভাবে সফল না হলেও জাতীয় ইতিহাসে এর বিশেষ গুরুত্ব আছে।
১)নবযুগের সূচনায়:
স্বদেশি আন্দোলন ছিল ভারতের জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে প্রথম পূর্ণাঙ্গ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। স্বদেশি আন্দোলনের মধ্যেই প্রথম স্বরাজের আদর্শ উচ্চারিত হয়। এর মাধ্যমেই ভারত ইতিহাসে নবযুগ সূচিত হয়।
২)কংগ্রেসের বিভাজনে:
এই আন্দোলন নীতিগত ক্ষেত্রে পরিবর্তন নিয়ে এসে জাতীয় কংগ্রেসকে ‘নিরমপন্থী’ ও ‘চরমপন্থী’ দুটি সুস্পষ্ট ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছিল। ১৯০৭-এর সুরাট অধিবেশনে এই বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয়।
৩)বঙ্গভঙ্গ রদে:
জাগ্রত জনমতের প্রবল চাপ উপেক্ষা করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে সরকার বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা রদ করতে বাধ্য হয়। তবে বাংলা প্রেসিডেন্সি তার আয়তন যেমন হারায়, তেমনি ভারতবর্ষের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয় (১৯১১ খ্রি.)।
৪)সর্বক্ষেত্রে আলোড়ন:
স্বদেশি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে স্বদেশি শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জগতে যে উজ্জীবন ঘটেছিল, জাতীয় আন্দোলনের আর কোনো পর্যায়ে তা দেখা যায়নি। সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্পসহ প্রতিটি ক্ষেত্র এর ফলে সমৃদ্ধ হয়। পরবর্তীকালের জাতীয় আন্দোলন গড়ে তোলার অনুপ্রেরণা দেয় স্বদেশি যুগের কবিতা, গান ও নাটকগুলি। সুমিত সরকারের মতে, ‘No other phase of our national movement can boast of Cultural accompaniment as rich as Swadeshi’.
৫)ভবিষ্যৎ সংগ্রামের পথনির্দেশে:
বঙ্গভঙ্গ রদ করার এই প্রয়াস শীঘ্রই ভারতে ইংরেজ শাসন অবসানের প্রচেষ্টায় রূপান্তরিত হয়। এর আগে আর কোনো ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন এত গতিশীল ও সংগ্রামশীল হতে দেখা যায়নি। জাতীয় নেতৃবৃন্দ এই রূপান্তরের মধ্যে দিয়েই ভবিষ্যৎ সংগ্রামের পথনির্দেশ পান।
৬)মলে-মিন্টো সংস্কার প্রণয়নে :
আন্দোলনের স্বতঃস্ফূর্ততায় ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করে যে, ভারতীয়দের হাতে কিছু শাসনতান্ত্রিক অধিকার ছেড়ে দিতে হবে। ফলে প্রবর্তিত হয় ‘মলে-মিন্টো সংস্কার আইন’ (১৯০৯ খ্রি.))
৭)নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের ক্ষেত্রে:
এই আন্দোলনের নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের মন্ত্র পরবর্তীকালে গাস্থিজির অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ভারতব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এখানে প্রযুক্ত ‘ধর্মঘট’ গান্ধিজির আমলে ‘হরতাল’ হয়ে দেখা দেয়।
৮)নারীসমাজের অংশগ্রহণে:
বঙ্গভঙ্গের বর্বরোচিত সিদ্ধান্ত নারীচেতনার জাগরণ ঘটালে নারীসমাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বদেশি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। সরলাদেবী চৌধুরানি, অম্বুজা সুন্দরী দাশগুপ্ত, নগেন্দ্রবালা ঘোষ, লীলাবতী মিত্র, লাবণ্যপ্রভা দত্ত সহ অজস্র নারী বিদেশি দ্রব্য বর্জন ও স্বদেশি দ্রব্য ক্রয়ের পাশাপাশি অবস্থন কর্মসূচি পালন ও রাখীবন্ধন উৎসবে যোগদানের মাধ্যমে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেন।
মন্তব্য:
স্বদেশি আন্দোলন যথার্থই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি দিক্চিহ্ন হয়ে আছে। স্বদেশি আন্দোলনের সময় থেকেই ‘অহিংস’ ও ‘সহিংস’ এই দু-ধারার আন্দোলন পাশাপাশি চলতে থাকে। গান্ধিজি নিজেও স্বীকার করেছেন — ‘After the partition people saw that petitions must be backed up by force and that they must be capable of suffering.’
PDF বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন – Read Offline
তথ্যসুত্রঃ-
১) আধুনিক ভারতের ইতিহাস – বিপান চন্দ্র
২) পলাশী থেকে পার্টিশন – শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়
৩) স্বদেশ সভ্যতা ও বিশ্ব – জীবন মুখোপাধ্যায়
৪) স্বদেশ পরিচয় – জীবন মুখোপাধ্যায়
৫) ইতিহাস শিক্ষক – হাজরা ও দত্ত
৬) স্বদেশ ও বিশ্ব – শান্তনু মিস্ত্রী